আরডস সাহেব একজন হাঙ্গেরিয়ান গণিতবিদ । গণিতবিদ তো কি হয়েছে ? কেন তার নম্বর থাকবে ? আসলে আরডস সাহেব ছিলেন একজন অমানুষিক(!) গণিতবিদ । ওনার ১৫০০ খানা গণিত বিষয়ক রিসার্চ পেপার আছে । যারা রিসার্চ কাজে আছেন তারা জানেন এতখানা বিসার্চ পেপার থাকার মানে কি ! আরডস এই বিশাল কাজগুলো করেছেন ৫১১ জন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে । এই সাঙ্গপাঙদের আরডস নাম্বার ১ আর আরডস সাহেবের নিজের আরডস নাম্বার ০ । আরডস নাম্বার ২,৩ এগুলো তাহলে কাদের । আরডস নাম্বার ২ হল তাদের যারা আরডসের সাঙ্গপাঙদের সাথে অন্তত একখানা পেপার বের করতে পেরেছেন যদিও এরা সরাসরি আরডসের সাথে কোন কাজ করেন নি । এভাবে আরডস নাম্বার ৩ কাদের সেটা এখন নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন ।
স্যার এটা বলার পর আমরা বুঝে গেলাম যে আমাদের আরডস নাম্বার ১ হওয়ার কোন কারন নেই কারন আরডস সাহেবের সাথে কাজ কোনদিন করেছি বলে মনে পড়ে না ! আরডস নাম্বার ২,৩,৪ কিছু একটা হওয়ার কারন থাকতে পারে কিন্তু সেটা নির্ভর করছে স্যারের উপর । অনেকেই তো ওনার আন্ডারে থিসিস করছি । যা-তা করে খেটেখুটে স্যারের সাথে একটা পেপার বের করলেই হল । ব্যস আরডস নাম্বার আর ঠেকায় কে ? স্যারের আরডস নাম্বারের সাথে ১ যোগ করলেই হবে । আমরা আরডস নাম্বার প্রাপ্তির আশায় স্যারের মুখের দিকে তাকালাম । স্যার বললেন তার আরডস নাম্বার ৩ হতে পারে । মুখটা চকচক করে উঠল আমাদের । ৪ আরডস নাম্বার প্রাপ্তি তাহলে সময়ের ব্যাপার মাত্র ? যাক না আর কয়েকটা দিন ।
<২> আরডস সাহেবের কিছু মহান উক্তি -
১। শিশুরা হল এবসাইলন (গণিতে ক্ষুদ্র ধনাত্বক মান সূচিত করতে এবসাইলন ব্যবহৃত হয়) ।
২। নারীরা হল বস(Boss) , নররা কৃতদাস (!)।
৩। যে গণিত করা বন্ধ করেছে সে মৃত ।
৪। বিবাহিত পুরুষ বন্দী ,অবিবাহিত পুরুষ মুক্ত ।
৫। সঙ্গীত মানে হল গোলমাল , কলরব , অহেতুক শব্দ ।
যাপিত জীবন-০৬ : : আপনার আরডস নাম্বার কত ?
বোয়াল
আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমি একবার মাছ ধরতে যাই । এটাকে অবশ্য মাছ ধরা না বলে মাছ দেখাও বলা যেতে পারে । আমার এক বন্ধু একবার বলেছিল জ্যোসনা রাতে করতোয়ার বোয়ালরা তীরের খুব কাছাকাছি চলে আসে । পানিতে তাকালে নাকি বোয়ালের জ্বলজ্বল করা রূপালী চোখ দেখা যায় । রূপালী চোখ নিয়ে বোয়ালরা যখন চারপাশে ঘুরে বেড়ায় তখন যে দৃশ্যের সৃষ্টি হয় তার নাকি কোন তুলনা নাই । বোয়ালের এই চোখ দেখার উদ্দেশ্য নিয়েই আগষ্ট মাসের হাল্কা গরমের এক রাতে করতোয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম ।
নজুপুর হাটের পাশেই এই করতোয়া নদী । হাটসংলগ্ন তীরে নদীটা ক্রমশ ভাঙছে । দোকানীদের হয়েছে অসুবিধা । কিছুদিন পরপরই দোকান সামনে এগিয়ে নিতে হয় , নদী এগিয়ে আসে । করতোয়ার অপর তীরে দীর্ঘ চর । চরের মাটিতে আখ , চীনাবাদাম আর আলুর চাষ হয় । চর থেকে ওপারের গ্রাম্য হাটটা দেখতে ভালই লাগে । হাটের রাতে তীরসংলগ্ন দোকানগুলোর হ্যাজাক আর কুপির আলো দোকানের ফাঁকা ফাঁকা করে বসানো কাঠের চিরগুলোর মধ্য দিয়ে নদীতে এসে পড়ে । মনে হয় অজস্র জোনাকী যেন সার বেঁধে নদীর পানিতে এসে লম্বা লাইন দিয়েছে । আজও হাটবার ছিল । দেখতে দেখতে হাটটা ফাঁকা হয়ে গেল সন্ধ্যার পরপরই । গ্রামের হাট , বেশী রাত জাগার অভ্যাস নেই । হাট থেকে ফিরে আসা শেষ নৌকার লোকগুলোও চরের মধ্যে কিছুক্ষন বসে বিড়ি-সিগারেট খেয়ে ফিরে গেল । এই বিস্তীর্ণ চরে মানুষ বলতে গেলে এখন বোধহয় শুধু আমি আর রজব সরদার ।
রজব সরদারের বয়স প্রায় পয়তাল্লিশের কাছাকাছি । খাটো ,পাতলা টিঙটিঙে একজন লোক । এ বয়সে মাথার চুল কিছু পাকার কথা থাকলেও এনার চুল পাকে নি । রজবের বাড়ী এই করতোয়ার পাশেই কেবলাপুর গ্রামে । ঘরে জোয়ান ছেলেরা আছে । তারাই জমিজমা দেখাশুনা আর ক্ষেতখামারীর যাবতীয় কাজ করে । রজব সরদার মাছ ধরেন । মাছ ধরা তার পেশা নয় নেশা । যদিও রজবের কথাবার্তা শুনলেই বোঝা যায় কাজটা নিতান্তই শখের বশে হলেও বেশ মনযোগ দিয়েই পেশাদারিত্বের সাথে করেন তিনি । রজবের সাথে আমার প্রথম যখন এই অন্চলে এসে দেখা হয় তখন সে আমাকে বলেছিল , বুঝলেন মাছ ধরাটা হইল গিয়া একটা বদ নিশা , মদ আর মাইয়ামানুষের চাইয়াও খারাপ নিশা , সহজে ছাড়ান যায় না । যৈবনে যে একবার মাছ ধরে বুড়া বয়সে আইসাও তারে মাছ ধরতে হয় । আমি রজবের কথা শুনে সেসময়ে হেসেছিলাম ।
অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ের রাত । সারাদিনে গরম থাকলেও রাতের বেলা দেখি চরে ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব । উত্তরবঙ্গ , একখানে শীত বেশ তাড়াতাড়িই আসে । রজব আমাকে ফুলহাতা শার্টটার নিচে গেন্জিজাতীয় কিছু একটা পড়ে নিতে বলেন । আমি বলি কোন গেন্জি তো আনি নি । রাতে এরকম শীত পড়বে কে জানত ? রজব বলেন চিন্তা কইরেন না । চালা থেকে গিলাপ(চাদর) দিয়া দিমুনে ।
এই চরের মধ্যে রজবের চালা আছে জেনে আমি একটু আশ্চর্য হই । আরও আশ্চর্য হই চালার গঠনশৈলী দেখে । চালা ঘর বলতে যে রকম ঘর কল্পনায় চলে আসে সেরকম ঘর এটা নয় । কোন রকমে দুইজন মানুষ থাকার
জন্য একটা কুঠুরিমতন জিনিস তৈরী করা হয়েছে আখের পাতা আর বাশের কঞ্চি দিয়ে । কয়েকটি কঞ্চি এক জায়গায় করে খুটির মত বানিয়ে উপরে আখের সরু পাতা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে । প্রথম দিন যখন রজবের সাথে এই চরে দেখা হয়েছিল তখন চালাটি চোখে পড়ে নি । আমি রজবকে বলি কি এখানে থাকেন নাকি ? রজব বলেন মাছ ধরন হইল গিয়া ধৈর্য্যের কাম । কতক্ষন আর ধৈর্য্য রাখা যায় । মাঝে মইদ্যে চালায় যাই , খানিকটা জিরায়া আসি। বাড়ী থাইকা আহনের সময় সাথে মশারী নিয়া আহি । মশার যন্ত্রনা আছে । চারপাশে টাঙায়া দেই । ইচ্ছে হইলে তাই ঘুমোনও যায় । রজব আমাকে চালার মধ্য থেকে চাদর বের করে দেন । চালার মধ্যে রজবের মাছ ধরার সামগ্রী আর কিছু শুকনা খাবারও দেখি । আমার আর তর সয়না বলি চলেন , মাছ ধরার আয়োজন শুরু করি । যদিও আমার উদ্দেশ্য মাছ ধরা নয় মাছ দেখা তারপরও রজবকে মাছ ধরার কথাই বলতে হয় । এই নিশুতি রাতে কেউ একজন মাছের চোখ দেখার জন্য এই চরে পড়ে আছে এটা শুনলে রজব নিশ্চই আমাকে পাগল ভাববে । রজব অনিকক্ষন কাশেন । চরের ঠান্ডা হাওয়ায় দিনের পর দিন থেকে হয়ত কাশি লাগিয়ে ফেলেছেন । কাশি থামানোর পর বলেন , চ্যাং দিলেও এহন কাম হইব না । মাছেরা মানুষের চাইতে রাত ভাল বোঝে , বেশী রাত না হইলে তীরের কাছে আহে না । চ্যাং শব্দটা আগে কোনদিন শুনেছি বলে আমি মনে করতে পারি না । রজবের কাছে জানতে চাই এই চ্যাংটা কি ? রজব বলেন , চ্যাং হইল গিয়া গড়াই মাছেরই একটা জাত । তয় এরা বেশী অস্থির । বরশীতে গাঁইথা পানিতে ছাইড়া দিলে খালি লাফায় । এদের বোয়াল কামুড় দিলেই বোয়াল শ্যাষ , বরশী ঢুইকা যায় বোয়ালের মুখের মইদ্যে ।
রজব চালাঘর থেকে চটের একটা বস্তা এনে চরের হাল্কা ভেজা বালিতে পেড়ে দেন । আমি বসি । রজব হুকায় টান দিতে থাকেন । এই দিনেও লোকজন হুকা খায় এটা আমার জানা ছিল না । আমি তন্ময় হয়ে রজবের হুকা খাওয়া দেখি । রজব গল্প জুড়ে দেন , নিতান্ত পারিবারিক গল্প ।
রাত গভীর হয়ে গেল রজব পলিথিনের একটা প্যাকেট থেকে চ্যাং বের করা শুরু করেন । প্যাকেটের পানিতে দেখি এরা ভালভাবেই বেঁচে আছে । রজবের কথাই ঠিক , এই মাছ অতিশয় অস্থির । হাতে নেয়ার সাথে সাথে মাথা ও লেজ একসাথে প্রবলবেগে নাড়াতে শুরু করে । রজব একটা একটা করে চ্যাং বরশীতে গাঁথেন । শরীরের মাঝামাঝি বরশী গাঁথার ফলে চ্যাং আরও বেশী করে লাফাতে শুরু করে । বরশীর সূতাটার আরেক মাথা বাঁধা হয় শক্ত বাশের কঞ্চির সাথে , নদীর পাড়গুলোতে এগুলো নাকি পোতা হবে । আমি আর রজব দুজনে মিলে সবগুলো কঞ্চিগুলো কিছুদূর ফাঁক ফাঁক করে করে তীরে গেড়ে আসি ।
আমরা চালার সামনে এসে বসে পড়ি । রজব আবার বলতে শুরু করেন , বুঝলেন তো মাছ ধরা হইল গিয়া ধৈর্য্যের কাম....... । হ্যাঁ , মাছ ধরা যে আসলেই চরম ধৈর্য্যের একটা কাজ সেই রাতে সেটা বুঝতে পারলাম হাড়ে হাড়ে । অনেকক্ষন আগে চ্যাংসমেত বরশী দেয়া হলেও সেগুলোতে কোন মাছ পড়ে না । আমি মাঝে মাঝে পানির কাছাকাছি গিয়ে টর্চ মেরে দেখি , বোয়ালের চোখ খুঁজি । রজব হয়ত মনে করেন মাছ পড়ছে না দেখে আমি অস্থির হয়ে পড়েছি । আমাকে বলেন , ঘুরনের কাম নাই আপনের , এইহানে আইসা বসেন । বোয়াল পড়লে এমনিতে বুঝবেন , পানির মইদ্যে চ্যাংয়ের ছঠফটানি যাইব বাইড়া । বোয়াল আইসা চ্যাংরে একেকটা কামড়াইব আর চ্যাংও এদিক-ওদিক লাফাইব । হ্যাঁ , চ্যাংকে ঘায়েল করতে বোয়ালের বোধহয় ভালই সময় লেগে কারন পানিতে একসময় বেশ হুটোপুটির শব্দ শোনা যায় । নিস্তব্ধ করতোয়ার পাড়ে শব্দটা ঠিক যেন বর্শার ফলার মতই বেঁধে কানে । রজব বলেন , চলেন একটা বুঝি পড়ল । আমি আর রজব তড়িঘড়ি করে যাই শব্দটার উৎসটার কাছে ।
গিয়ে দেখি কঞ্চিটা ঠিকই চরের বালিতে গাড়া আছে , বরশীও ঠিক আছে কিন্তু বরশীতে গাঁথা মাছটা আর নেই । আমি রজবকে আমার বামে একটু দূরে পানিতে রূপালী রংয়ের একটা চোখ দেখাই । রজব বলেন , ওঠেন , তাড়াতাড়ি টর্চটা ফেলেন ঐদিকে । আমি আমার সাথে থাকা এক ব্যাটারীর টর্চের আলো নদীর পানিতে ফেলি । পনির মধ্যে রূপালী চোখ নিয়ে একটা বোয়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে । রজব অনেকক্ষন কেশে নেন তারপর বলেন , এই বোয়ালটা অনেক বড় , গতবার পাইছিলাম এইরকম একটা। সচরাচর এইরকম বড় বোয়াল পাওয়া যায় না । আমি বলি কোথায় আমার কাছে তো খুব একটা বড় মনে হল না । রজব বলেন আপনারা সাহেব-সুবা শহরের মানুষ , পানির উপরে থাইকা কি আর বোয়ালরে বুঝতে পারবেন । এতবড় একটা বোয়াল হাতছাড়া হওয়ায় রজবের মন একটু খারাপই হওয়ার কথা কিন্তু তাকে দেখে সেরকম মনে হল না । তিনি বলে চললেন , বুঝলেন যত বড় মাছ তত চালাক । চালাক না হইলে কি আর পানির এত শত্রুর মইদ্যে বাইড়া ওঠন সম্ভব । দেখলেন না চ্যাংটারে কেমনে খাইয়া গেছে । বরশী তো আমরা দিছিলাম চ্যাংয়ের পেটের মইদ্যে । এইটা কামুড় দিছে ল্যাজে । যাই হোক একবার যহন খাইছে তখন এইটা এহানেই থাকব । আসেন আমরা আরেকটা চ্যাং দেই । রজব আগের মতই পলিথিনের প্যাকেটটা থেকে আরেকটা চ্যাং এনে বরশীতে গেঁথে দেন । আমরা চালার সামনে গিয়ে আবার বসে পড়ি ।
খনিকক্ষণ পর আবার হুটোপুটির শব্দ শুরু হয় পানিতে । আগের জায়গাটা থেকেই শব্দটা আসছে । আমরা আবার প্রবল আগ্রহ নিয়ে কঞ্চিটার কাছে যাই ও হতাশ হই । চ্যাংটা নেই । হয়ত আগের বোয়ালটাই মাছটা খেয়ে গেছে অথবা নতুন কোন বোয়াল এসেছিল । বজব আমাকে বলেন , বুঝলেন আগের বোয়ালটাই চ্যাং টা খাইয়া গ্যাছে । এত জলদি জলদি আরেকটা পড়নের কথা না । রজব আরেকটা মাছ বরশীতে গেঁথে দেন এবং আগের মতই আমরা আবার চালার সামনে এসে বসি । আবার কিছুক্ষণ পর বরশীতে বোয়াল পাওয়ার শব্দ পাই কিন্তু কোন বোয়াল আর পাওয়া যায় না । রজবের এই একটা বরশীতেই আরো দুটা চ্যাং নষ্ট হয় , একটাতেও পড়ে না বোয়াল । রজব বিড়বিড় করে কি যেন বলেন । হয়ত মেজাজ খারাপ হয়েছে তার । আমার বেশ মজাই লাগে । আগেই বলেছি মাছ ধরার কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এই রাতে করোতোয়ার পাড়ে আমি আসি নি এসেছি জ্যোসনা রাতে বোয়ালের রূপালী চোখ দেখতে । সে আশা আমার প্রথমবারেই পূর্ণ হয়েছে । সে এক দৃশ্য বটে ! বন্ধুটা আমার ঠিকই বলেছিল । গোটা দুনিয়ায় এরকম সুন্দর দৃশ্য খুব একটা নেই ।
রজব বলেন বুঝলেন তো এইভাবে হইব না , পঁচা লাগব । রজব লোকটার এই এক মুদ্রাদোষ কথায় কথায় বলেন বুঝলেন । পঁচা জিনিসটা কি আমার মাথায় ঢোকে না । আমি বলি পঁচা কি ? রজব বলেন , পঁচাই হইল আসল ধৈর্য্যের খেলা । আসেন আপনেরে দেখাই । রজব চালাঘর থেকে আরেকটা প্লাষ্টিকের প্যাকেট খোলেন । প্যাকেটের ভিতরে বেশ কটু গন্ধযুক্ত রোদে শুকানো পুঁটি মাছ । মাছগুলোর ভিতরের পুরে কাঁটাই বেশ দক্ষতার সাথে তুলে ফেলা হয়েছে । রজব একটা মাছ নিয়ে কাঁটার ফাঁকা জায়গাটায় একটা বরশী বিঁধে দেন । যে জায়গাটায় বোয়ালটা বারবার চ্যাং মাছগুলো খেয়ে যাচ্ছিল তার পাশেই নদীর পানিতে সামান্য দূরে বরশীটা ছুড়ে দিয়ে চরের মাটিতে বসে পড়েন । আমাকে বলেন , বসেন । এইবার হইল গিয়া আসল খেলা । পঁচাটা দিলাম পানির মইদ্যে , এহন বইসা থাকনের পালা । ফকফকা জোসনারা রাইত , খালি বইসা তাকবেন আর খিয়াল করবেন বরশীটার দিকে । পঁচার পুঁটিটা যখন বোয়ালে খাইব তখন বরশীর সূতাটা সইরা যাইতে থাকব একদিকে । বাস , যেইদিকে সূতাটা সইরা যাইব তার উল্টাদিকে দিবেন জোরসে একটা টান । বোয়ালের গলায় আটকাইয়া যাইব কাঁটাটা ।
রজবের কথায় আমি আশ্চর্য না হয়ে পারি না । এত মনযোগ দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কিভাবে পঁচার দিকে তাকিয়ে থাকা সম্ভব? রজব আবার বলেন , এইজন্যি তো আপনেরে বারেবারে কই বড়ই ধৈর্য্যের কাম এইটা । এইযে বসছেন একবার পঁচা দিয়া , সারারাত বইসা থাকলেও যে মাছের নাগাল পাবেন তার কি কোন ঠিক আছে ? রজব বসে থাকেন । বসে থাকতে থাকতে পা লেগে গেলে একসময় আমাকে পঁচাটা দেন । ধরেন , এট্টু তামুক খাইয়া আহি । আমি পঁচাটা ধরে বসে থাকি আর মাছের চোখ দেখার জন্য এদিক-ওদিক তাকাই । কিছুক্ষণ পরেই রজব আবার ফিরে এসে আবার পঁচাটা ধরেন । আমি নদীর ধারে এদিক-ওদিক হাটি , সিগারেট খাই , চালাঘরে শুয়ে থাকি । মাছ আর পঁচায় পড়ে না । দু-একবার রজবের কাছে যাই এখানেও নাকি বোয়াল টোপ খেয়ে যাচ্ছে । রজব বলেন , বুঝলেন বড়ই কাউটা মাছরে ভাই এইটা , ক্যামনে ক্যামনে জানি পঁচা খাইয়া যাইতাছে । আমি বলি কিভাবে বুঝলেন এটা আগের বোয়ালটাই , অন্য বোয়ালও তো হতে পারে । রজব খানিকটা ক্ষেপে যান । বিশ বছর ধইরা মাছ ধরতেছি । মাছেরে ভালই চিনি । তয় এরে ছাড়তেছি না আজকে । আপনে যান চালায় শুইয়া পড়েন ।
আমি চালাঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ি । মশারীর ফাঁক দিয়ে চরের হাল্কা ঠান্ডা বাতাস ভেঙে ভেঙে ঘরটার মধ্যে ঢুকে পড়ে । ঘুমানোর জন্য আদর্শ আবহাওয়া । ঘুমানোর ইচ্ছা না থাকলেও তাই একসময় ঘুমিয়েই পড়ি ।
ঘুম ভাঙে প্রায় শেষ রাতের দিকে , রজবের গজগজানিতে । বুঝলেন এতদিন ধইরা মাছ ধরি এইরকম চালাক মাছ আর দেখিনি । চ্যাং-পঁচা কিছুই মানতেছে না । চলেন এইবার শেষ চেষ্টাটা করি , কাটাটা মারি । চালাঘরে আমি যেখানে শুয়েছিলাম তার নিচ থেকে পাতলা লোহার তৈরী শাবল জাতীয় একটা জিনিস বের করেন রজব । জিনিসটার মাথায় শাবলের মতই তীক্ষ্ণ ফলা । এটাই নাকি কাটা । রজব পলিথিনের ব্যাগ থেকে শেষ চ্যাংটা বের করেন । আগের মতই চ্যাং টা বরশীতে গেঁথে বরশীর সূতা কঞ্চিতে বেঁধে আগের জায়গাটাতেই পুতে ফেলেন । রজব বলেন , বুঝলেন শ্যাষবারের খেলা এইবার । বোয়ালের চ্যাং টারে ধরার আওয়াজ পাইলেই টর্চ মারবেন ঐ জায়গায় । এরপরে আমি আছি । আমরা আবার চরের মাটিতে বসে জলের শব্দ শুনতে থাকি । অনেকক্ষণ বসে থাকার পরও যখন কোন বোয়াল আসে না তখন আমার মেজাজ সত্যিই খারাপ হতে থাকে , মাছ ধরাতো আমার কাজ নয় ! আমি রজবকে বলি চলেন আজকে আর মনে হয় হবে না । ঐ বোয়ালটাই যে আসবে তার কি গ্যারান্টি ? রজব আমার কথার কোন জবাব দেন না । মনে হয় বিরক্ত হয়েছেন আমার ওপর । তবে মাছটার উপর তার ক্ষোভ কোন পর্যায়ে এসে পড়েছে তা বুঝতে পারি । আমি এবার রজবের সামনেই একটা সিগারেট ধরিয়ে বসে পড়ি । রজব বলেন সারারাইত তো থাকলেনই , এই শ্যাষবার একটু দেহেন ।
রজবের কথা মিথ্যা হয় নি । ফজরের আজানের ঠিক একটু আগে পানিতে চ্যাংয়ের লাফালাফি প্রবল হয়ে ওঠে । বোয়ালের রূপালী চোখটা আবার আমি দেখতে পাই । রজব মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলেন আর ইশারায় আলো ফেলতে বলেন । আমি পানিতে মাছটার উপর আলো ফেলি । আলো ফেলামাত্র রজব কাটাটা নিয়ে বিদুৎবেগে মাছটার শরীরে বিদ্ধ করার জন্য পানিতে লাফ দেন । বয়স্ক একজন লোক কিভাবে এত তাড়াতাড়ি কাটাটা সমেত পানিতে লাফিয়ে পড়ে কাটাটা মাছের গায়ে বিদ্ধ করার চেষ্টা করেন তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন । হয়ত টর্চের আলোয় মাছ দূরে সরে যেতে চায় । এত তাড়াতাড়ি না করলে চলবে কিভাবে ? রজবের শেষ চেষ্টাটা বিফলে যায় নি । বেশ বড় সাইজের কাটাবিদ্ধ একটা বোয়াল নিয়ে রজব উঠে আসেন পানি থেকে । কাটাটা দেখি বোয়ালের শরীরের ঠিক মাছখানে বিঁধেছে । থেতলে গেছে বেশ খানিকটা অংশ । রজবের মুখে বিজয়ীর হাসি । কইছিলাম না আগের বোয়ালটাই , দেখছেন কত্ত বড় । আগের বছরে যেইটা পাইছিলাম টার চাইতে এটা বড় । বুঝলেন এইজন্যি কাটা দিয়া মাছ ধরি না , মাছের শইল বলতে কিছু থাকে না । আমি মাছটার দিকে তাকিয়ে থাকি । জলের মধ্যে জীবন্ত মাছের চোখ আর জলের বাহিরে মৃত মাছের চোখের মধ্যে কত পার্থক্য । রজব বলেন আপনেরে কিন্তু আজকে আর সহজে ছাড়তেছি না । সকালে বাড়িত থাইকা মাছের পেটি দিয়া ভাত খাইয়া যাবেন ।
আমি কিছু বলি না । এরকম লড়াকু , পরাজিত আর অবশেষে মৃত বোয়ালটা দেখতে আমার কেন জানি ভাল লাগে না ।
আংটি কাহিনী
অষ্টম শ্রেনীতে তাই বাবা যখন বললেন বৃত্তি পেলে একটা সাইকেল কিনে দেবেন জাবের তখন কথাটায় খুব একটা বিশ্বাস রাখতে পারে নি । তবুও তার মনে যে একটা ক্ষীণ আশা ছিল না তা নয় । ছাত্র হিসেবে সে খুব একটা খারাপ না হলেও অন্তত জেলা শহর থেকে বৃত্তি পাওয়ার মত একজন নয় । বৃত্তিটা পেলে সেটা তার কাছে একটা অনাকাঙ্খিত বিষয় তো হবেই বাবা মা ও নিশ্চই খুশিই হবেন । তখন একটা সামান্য সাইকেল দেওয়া তাদের জন্য এমন বিচিত্র কিছু হবে না । জাবেরর মনে এতটুকু ক্ষীণ আশা ছিলই তাই সে বছরের প্রথম থেকে পড়াশুনায় বেশ মনোযোগ দিয়েছিল ।
সে বছর জাবের সরকারী বৃত্তিটা পেয়েছিল ঠিকই কিন্তু তার আশাটা আর পূর্ণ হয় নি । সাইকেল নিয়ে প্রাইভেটে ব্যাচে যাওয়ার , এই একটু বিকেল বেলায় নদীর ধারের রাস্তাটা দিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সাধটা তার অচিরেই মারা পড়ল । সাইকেল নিয়ে শহরের ব্যস্ত গাড়িঘোড়ার রাস্তায় চলতে সমস্যা হবে , পড়াশুনা কমিয়ে সারাদিন পইপই করে ঘুরবে এরকম নানান অজুহাত দেখিয়ে বাবা মা আর সাইকেলের রাস্তায় গেলেন না । সাইকেলের বদলে একটা সোনার চেইন কিনে দিলেন জাবেরকে । সোনার চেইনটা নিয়ে জাবের এক মহা সমস্যায় পড়ল । একে তো সে পুরুষমানুষ আর পুরুষমানুষের সোনাই যেখানে পরা ধর্মমতে ঠিক নয় তখন এই অল্প বয়সেই কেন তাকে এরকম একটা চেইন পড়তে দেয়া হল এটার কোন কূল-কিনারা করতে সে করতে পারল না । তারপরেও সোনার এই চেইনটা পড়তে সে রাজী ছিল , রাস্তাঘাটে সে দু-একজনকে এরকম চেইন পরে ঘুরতে দেখেছে কিন্তু বিপত্তি বাধাল চেইনের সাইজটা । চেইনটা এত বড় যে বলতে গেলে তার নাভি পর্যন্ত চলে আসে । বাবা মা দিয়েছেন কি আর করা যাবে চেইনটা সে তাই দু-চারদিন পরল । কিন্তু বন্ধুদের যন্ত্রনা যখন চরমে পৌছাল তখন মাকে চেইনটা দেওয়া ছাড়া তার আর কোন উপায় রইল না । মা ও চেইনটা কোন কথা ছাড়া নিয়ে নিলেন । কে জানে হয়ত নিজের জন্যই কিনেছিলেন ! জাবের এটাই ভাবল আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল বাবা মার কোন প্রতিশ্রূতির আশা করা যাবে না । সান্ত্বনার একটা উপলক্ষ্য অবশ্য সে কয়েকদিন পরেই পেয়েছিল । নীল পাথর বসানো সোনার একটা আংটি দেওয়া হল এবার তাকে । অফিস থেকে ফিরে কলার থোড়ের মত লাল একটা বাকসের ভিতর থেকে আংটিটা বের করেছিলেন বাবা। আংটিটা পেয়ে জাবের একটু অবাকই হল । আংটির পাথর সাধারণত হাল্কা নীল বা খয়েরী বর্ণের হয় । তারটা গাঢ় নীল বর্ণের কেন এটা সে কিছুতেই বুঝতে পারল না । অবশ্য এই আংটিটার জন্য যে তাকে সামনের জীবনে খানিকটা ঝামেলা পোহাতে হবে তা তখনও সে জানত না ।
জাবের আংটিটা অনামিকাতেই পড়েছিল । অবশ্য কেউ তাকে সে সময় বলে দেয় নি অনামিকায় আংটি পরার একটা অন্য অর্থ আছে । ছোট বলেই হয়ত কেউ বলেনি । তবে যে সময় সে প্রথম কথাটা শোনে সে সময় সবেমাত্র তার সর্বনাশ হতে শুরু হয়েছে এবং এটা থেকে পরিত্রানটা তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে ।
কলেজে পড়ার সময়ই জাবের বাবাকে হারায় । পরের কয়েকটা বছর তাই সে খুব একটা সুবিধার মধ্যে পার করতে পারে না । বাবার সামান্য পেনশনের টাকায় নিজের , ছোট ভাইদের পড়াশুনা আর পরিবারকে চালিয়ে নিতে তাকে হাপিয়ে উঠতে হয়,ধরতে হয় টিউশনি । এসময় একেকটা দিন যেন একেকটা বছর মনে হতে থাকে তার কাছে । অবশ্য এ অবস্থায় তাকে বেশীদিন কাটাতে হয়নি । গ্রামের বাড়িতে নদীর মধ্যে থাকা জমিগুলো চর হয়ে জেগে ওঠাতেই যা রক্ষে । ওসব আধিয়ারদের দিয়ে যা টাকা-পয়সা পাওয়া যায় তাতে ওদের ভালই চলতে শুরু করে । ক্রান্তিকালের ঐ কয়েকটা বছরে তাকে দেখে হয়ত সবাই খানিকটা সহানুভূতিতে ভুগত , তাই হয়ত অনামিকার আংটিটার দিকে কেউ নজর কেউ কখনও দেই নি ।
অনামিকার আংটিটার দিকে যাদের নজর দেয়ার কথা ছিল তারাই অবশ্য প্রথম নজর দেয় , বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা । কিসের জন্য আংটি পরেছিস ? বিয়ে করেছিস ? এগেজড ? নাইলে কে দিল ? নানান প্রশ্ন । প্রথমদিকে অবশ্য সবাইকে সে খানিকটা সময় নিয়ে আংটির বিষয়টা বলত পরে হাল ছেড়ে দিয়েছে । হেসে বলে হ্যাঁ বিয়ে করেছি বা বিয়ে হবে হবে করছে । যদিও বিয়ে করা বা বিয়ে হবে হবে করা থেকে সে অনেকটা দূরেই ছিল সবসময় । আংটিটার জন্যই কিনা কে জানে মেয়েরা তার সাথে কখনো ভালভাবে মেশে নি !
একবার সে অবশ্য আংটিটা খোলার কথাও ভেবেছিল কিন্তু প্রায়াত বাবার শেষ স্মৃতির কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত খুলতে পারে নি । তবে অনামিকায় থাকাতেই যখন সমস্যা তখন এটাকে অনামিকা থেকে খুলে মধ্যমা বা অন্যকোন আঙুলে পরার কথাও সে একবার ভেবেছিল । শেষ পর্যন্ত এটাও হয়নি । সাত-আট বছর আগে পরা আংটি । এতদিনে তার বয়স বাড়ার সাথে সাথে আঙুলের বয়সও বেড়েছে , বেশ মোটাই হয়েছে আঙুল । অন্য আঙুলে পরা তো দূরের কথা সাবান দিয়ে ঘঁষেও অনামিকা থেকে আংটিটা খুলতে পারেনি । অবশেষে সে হাল ছেড়ে দিয়েছে , মনস্ত করেছে থাকুক অনামিকাতেই থাকুক বাবার স্মৃতিটা । বিয়ে করলে দরকার হলে বিয়ের আংটিটা অন্য আঙুলেই পরবে । আংটিটার যত্নেরও সে কোন ত্রুটি করে নি । দীর্ঘদিন ব্যবহারে আংটির গাঢ় নীল পাথরটা খনিকটা বিবর্ণ হয়ে গেলে সে এটাকে পাল্টিয়ে গাঢ় নীলের একটা পাথর বসিয়ে নিয়েছে ।
এমনিতেই আংটিটা নিয়ে জাবেরের কোন সমস্যা ছিল না , দুই একজন মজা করে বিয়েসাদি নিয়ে এটাওটা বলে তো বলুক সমস্যা নেই কিন্তু জাবেরের অন্য একটা কাজে আংটিটা বাধা হয়ে দাড়াল । বিয়ে করার জন্য জাবেরের একটা মেয়ের সাথে খনিকটা পরিচিত হওয়া বা আরও ব্যাপকভাবে বলতে গেলে প্রেম করা খুব দরকার হয়ে পড়েছিল । জাবেরের বাবা মা সেই কোন দশকের রক্ষনশীল সমাজে প্রেম করে বিয়ে করেছিল । তাই এই দশকের ছেলে হিসেবে তারও প্রেম করে বিয়ে করা বা নিদেনপক্ষে কিছুদিন জেনেশুনে একটা মেয়েকে বিয়ে করা প্রায় কর্তব্যের মধ্যে পড়ে । জাবের এটা বুঝেছে , বেশ ভালোভাবেই বুঝেছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ পর্যায়ে এসে এটাও বেশ ভালভাবেই বুঝেছে যে স্বাভাবিকভাবে যেভাবে প্রেম বা ভাবভালবাসা হয় তার এভাবে ওরকম কিছু হবে না , বিশেষত এ পর্যন্ত তার যখন কোন বান্ধবি পর্যন্ত কেউ একজন নেই ।
অগত্যা নিরূপায় তরুনের শেষ পথ হিসেবে সে ইন্টারনেটকেই বেছে নিয়েছে । আর কে না জানে এসব পথে জাবেরের মত তরুনদের জন্য মেয়েদের অভাব কখনো হয় নি । জাবেরেরও অবশ্য খুব একটা সময় লাগেনি । কিছুদিন একজনের সাথে ভাল ঘনিষ্টতার পর একজন তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল আজকালের ছেলেদের মত সে কানে সোনার দুলটুল পরে কি না ? জাবের নির্দোষ জবাব দিয়েছিল সেটা সে পরে না তবে সোনা যে একেবারে পরে না তা নয় একটা আংটি পরে । মেয়েটা জানতে চেয়েছিল কোন আঙুলে সে আংটিটা পরে । জাবের হুট হাট মিথ্যা বলতে পারে না অথবা সে ভেবেছিল আঙুলের কথাটা বলুক পরে কারনটা বলবে । কিন্তু মেয়েটা অনামিকার কথাটা শোনার পর আর বেশী দেরী করে নি । জাবের অবশ্য যোগাযোগের চেষ্টা খনিকটা যে করে নি তা নয় , লাভ হয়নি । জাবের সান্ত্বনা খুঁজেছে । ক বলতে কলিকাতা শোনার অভ্যাস এ দেশের লোকজনের বহু দিনের স্বভাব , খামাখা মেয়েটাকে দোষ দিয়ে কি লাভ ? অবশ্য জাবেরের মনে ক্ষীণ একটা আশা ছিল । পাশ করার পর অফিসে-আদালতে নিশ্চই হবে , কিছু একটা হবে । কিন্তু সে সবে গিয়ে সে দেখেছে কেউ আর তাকে বিয়ের কথাই জিজ্ঞাসা করে না । হয়ত এটা একটা খুবই ব্যক্তিগত একটা প্রশ্ন , জিজ্ঞাসা করতে লোকজনের রুচিতে বাঁধে অথবা সবাই তার অনামিকাতে আংটি দেখে বুঝেছে সে বিবাহিত । কেইবা জানে এই কুফা আংটির ফল তাকে কতদিন বয়ে বেড়াতে হয় ?
বাকিটুকু পড়ুন...