কুয়াকাটা-০১

[১] বুয়েটে এক শিডিউলে পরীক্ষা খুব কম সময়েই হয়েছে । এবারও তাই হল। ঈদের আগে একটামাত্র পরীক্ষা ছিল । এটাও নাকি দেয়া যাবে না । মিছিল হল দুইদিন । পরীক্ষা পিছাও , পরীক্ষা পিছাও আওয়াজ । আর বুয়েটের স্টুডেন্ট সবাই জানে এরকম মিছিল হলে পরীক্ষা আর হয় না । এবারও হল না। মাসখানেকের বন্ধ পেয়ে মনে হল এইবারে একটু কোথাও থেকে ঘুরে আসা যাক। সেই কবে একবছর আগে বান্দরবন-বগালেক গিয়েছিলাম এরপর এই এক বছরে শুধু খাওয়া-পড়া-ঘুম আর খাওয়া-পড়া-ঘুম । এই চক্র থেকে বের হতে হবে বলে মনস্ত করলাম । সিদ্ধান্ত হল কুয়াকাটা যাব । কুয়াকাটায় আগে কখনো যাওয়া হয় নি । এখানে নাকি সূর্যাস্ত-সূর্যোদয় দুটোই দেখা যায় । যতদূর চোখ যায় পানি ছাড়া আর কিছু নেই এমন একটা জায়গা থেকে আস্তে আস্তে সূর্য উঠবে আবার সারাদিন গরম ছড়িয়ে পড়ন্ত বিকেলে এই রকমই আরেকটা জায়গা দিয়ে আস্তে আস্তে নামতে নামতে একসময় পানির মধ্যে হারিয়ে যাবে এরকম দুটি দৃশ্য কল্পনা করতেই ভাল লাগছিল । এ দৃশ্য দেখার জন্য খুব বেশী দেরী করতে হল না । বলামাত্র আরও পাঁচজন রাজী হয়ে গেল । সুন্দরবন-৫ এর কেবিনে শুক্রবার সন্ধ্যায় আমরা ছয়জন চেপে বসলাম ।

[২] লঞ্চে আগে কখনো চড়া হয় নি । সাঁতারও জানি না । সাঁতার শেখার চেষ্টাও করিনি জীবনে । সারাবছরে যে হারে লঞ্চ ডোবে এর আর ভরসা কি ? লঞ্চে উঠে আমি তাই কেবিনের আশে-পাশে সবার অলক্ষ্যে লাইফ জ্যাকেট জাতীয় কিছু খুঁজে বেড়ালাম । এরকম কিছু পেলাম না । কেবিনের দরজার সামনে অবশ্য যানবাহনের টায়ার টাইপ একটা জিনিস দেখতে পেলাম । ভাবলাম যাক এটা দিয়ে অন্তত ভেসে থাকা যাবে ।অন্য পাঁচজন যখন কেবিনের সামনে আড্ডাকেবিনের সামনে আড্ডাকেবিনে আড্ডায় মশগুল আমি তখন এই টায়ার জাতীয় জিনিসটা খোলার চেষ্টা করলাম এবং যারপরনাই হতাশ হলাম ।এখন যদি এটা খোলা না যায় লঞ্চ ডোবার ক্রান্তিকালে এটা কিভাবে খোলা যাবে ভেবে পেলাম না । কুয়াকাটায় বীচে গিয়ে দেখেছি একটা ফুটবল নিয়ে আরামসে পানির মধ্যে ভেসে থাকা যায় । আগে জানলে এদের উপর আর ভরসা না করে নিজেই ব্যাগের মধ্যে একটা ফুটবল নিয়ে আসতাম ! জীবন বলে কথা । ফুটবল পাওয়া কঠিন কিছু হত না । হলের পোলাপাইনের কাছে বিকেলে খেলার জন্য এমনিই ফুটবল থাকে ।

রাতের লঞ্চভ্রমন অদ্ভুদ লাগে । চারিদিকে শুনশান নীরবতার মধ্যে মৃদু শব্দ তুলে লঞ্চটা এগিয়ে যায় । কেবিন পেরিয়ে সামনে লঞ্চের সার্চলাইট , মাঝে মাঝে সেটা জ্বলে ওঠে । লঞ্চের সার্চইটের পাশেলঞ্চের সার্চইটের পাশেএদিক ওদিক ফোকাস করে নদীরে বুক চিরে আলো ফেলে । হু-হু করে মৃদু ঠান্ডা বাতাস এসে চরিদিক ভরিয়ে দেয় । সোজা কথায় বলতে গেলে এক অপার্থিব পরিবেশ ।

[৩] কুয়াকাটা যাওয়ার আগে এক সুশীলের পরামর্শ নিলাম । সে আমাকে বলল লঞ্চে যাবতীয় খাবারদাবার আগে থেকেই এনে রাখবি । লঞ্চের ডিনারের অবস্থা খুব খারাপ আর দামও বেশী সো বেশী টাকাপয়সা দিয়ে খাবাপ খাওয়ার কি দরকার ? আমি এই কথাটা সবার কাছে পাড়লাম । সদরঘাটে রিক্সা যখন পুরান ঢাকা দিয়েই যাচ্ছে সুতরাং ওখানকার কোন দোকান থেকেই রাতের খাবার হিসেবে মোরগ-পোলাও অথবা বিরিয়ানী নিয়ে যাওয়া হোক । কেউ কথাটায় খুব একটা গা করল না , সবাই নাকি লঞ্চের খাবারই খাবে । সুশীলের পরামর্শ কেউ শুনল না । অগত্যা আমি আর এক কুশীল এই দুই কুশীল মিলে পুরান ঢাকার একটা দোকান থেকে মোরগ পোলাও কিনলাম । আমি আবার মোরগ পোলাওয়ের সাথে গরূর মাংসও আলাদা করে কিনলাম । শালারা কথা শুনলি না , লঞ্চে ফালতু খাবার যখন তোরা খাবি তখন দেখিয়ে দেখিয়ে আমরা দুজন এসব খাব । পোলাওয়ের দোকানদারকে বললাম ভাই খাবারগুলো রাত দশটার দিকে খাওয়া হবে সমস্যা তো নাই নাকি ? সে বলল ছমছ্যার কি আছে ? সমস্যা অবশ্য হল , কিছুটা না , সমস্যা ভালই হল ।

রাতে দেখি লঞ্চে খাবারদাবারের বিশাল আয়োজন । দেশী মুরগীর ঝোল , সব্জি , ডাল চচ্চরী । ঘরোয়া রান্না সব । পরিবেশনের সময়ই বোঝা যাচ্ছিল খাবারের কোয়ালিটি বোধহয় ভালই ,অন্তত সুশীল বর্ণিত কুখাদ্য নয় । আমরা দুইজনও আমাদের বাক্স-পেটরা থেকে মোরগ-পোলাও বের করে খাওয়া শুরু করলাম । কুশীল বন্ধু সবাইকে শুনিয়ে পোলায়ের নানান গুনগান গাওয়া শুরু করল । কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম কেস খারাপ । পোলাও টক-টক লাগে কেন ? আমি তাকে কানে কানে বললাম আস্তে চাপা কম পিটা সমস্যা আছে । গরূর যে মাংসটা নিয়েছিলাম গন্ধটা বেশী উঠেছিল বোধহয় তাতেই । আমি তাই বলতে গেলে বসেই আছি খাবার নিয়ে । এখন কি করা যায় । এমন সময় কেবিনে আরেক কুশীল ঢুকল যে এতক্ষন বাথরুমে ছিল । সে এসেই বলল , কি ব্যাপার গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে কিসের ? আমি বললাম মোরগ পোলাওয়ের গন্ধ । সে বলল , না এটাতো পঁচা খাবারের গন্ধ মনে হচ্ছে , দেখ তোদের খাবার পঁচি (এই কুশীলের আবার ক্রিয়াপদে হ্রস্ব ই-কার প্রয়োগের বাতিগ আছে ) গেছে । আমরা বুঝলাম হ্যাঁ গন্ধটা মনে হয় বাড়াবাড়ি রকমেরই উঠেছে । খাওয়া আর গেল না বোধহয় । বাকী সবাই তখন লঞ্চের খাবারের প্রয়োজনের অধিক প্রশংসা শুরু করে দিয়েছে । হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে এরা সারাজীবনে এরকম মধুর রান্না আর খায় নাই , যদিও বোঝা যাচ্ছে এই প্রশংসার অধিকাংশই ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে । যাই হোক চিপায় পড়ে আমার দুজন তখন মিনমিনে গলায় ওরা যা খাচ্ছিল সেই খাবারেই অর্ডারই দিলাম । খাবার আসল । খাবার তো ভালই । রান্নায় কোন সমস্যা নাই । খাবারের বাকী পর্বটা ঐ সুশীলকে নিয়ে কুকথা বলেই পার করলাম সবাই ।

[৪] পটুয়াখালী পৌছালাম ভোরবেলায় । লঞ্চঘাটাতেই একটা মাইক্রোবাস পাওয়া গেল । মাইক্রোবাসওয়ালা দেখি পটুয়াখালি থেকে কুয়াকাটা মাত্র আটশো টাকা চায় । বাস ভাড়াই যেখানে প্রতিজনে একশো টাকা করে সেখানে ছয়জনের জন্য কিভাবে সে আটশো টাকা চায় ব্যাপারটা মাথায় ঢুকল না । মাইক্রোবাসে করে কুয়াকাটার পথেমাইক্রোবাসে করে কুয়াকাটার পথেতার উপরে পটুয়াখালি-কুয়াকাটা রাস্তার বেহাল হাল সবাই জানে । যাই হোক বিষয়টা পরিষ্কার হল একটু পরে । কোন জানি অফিসের মাইক্রোবাস এটা । সকাল দশটার মধ্যে এমনিতেই ওদের কুয়াকাটা যেতে হবে । আমাদের কাছে টাকা-পয়সা যা পাওয়া যাচ্ছে সেটাই ওদের লাভ । সে আমাদের বলে, এ ছাড়া এত সস্তায় কি আর পাইতেন , এই রুটের ভাড়া তো এম্নিতেই পয়ত্রিশশো টাকা । চাপাই কি না কে জানে । আমরা মাথা নাড়ি ও আচ্ছা ! যাই হোক ড্রাইভারেরও লাভ আমাদেরও লাভ । ভাগ্য বটে । পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটার রাস্তাটা যেরকম ভেবেছিলাম তার চেয়ে বেশী খারাপ । কোথাও কোথাও পীচঢালা রাস্তা , কোথাও কোথাও রাস্তার মাঝে ইটের টুকফেরীর অপারেটিং রুমে আমরা দুজন---ভাইজান একটু ফেরী চালাইতাম চাইফেরীর অপারেটিং রুমে আমরা দুজন---ভাইজান একটু ফেরী চালাইতাম চাইরা দিয়ে রাখা আছে হয়ত পীচ ঢালা হবে আর কিছুদিন পর , কোথাও কোথাও রাস্তার মাঝের পীচ বা ইট কিছুই নাই দেখলে মনে হয় কেউ যেন রাস্তাটা প্রবল আক্রোশে খুবলে খুবলে রেখে গেছে । আন্ধারমানিক পার হচ্ছি ফেরীতে করেআন্ধারমানিক পার হচ্ছি ফেরীতে করেযাত্রাপথে ফেরী পার হতে হল তিনটা নদীতে। নদীগুলোর নাম অসাধারণ । একটার নাম আন্ধারমানিক , একটার নাম সোনাতলা । তৃতীয়টা অবশ্য নদী কিনা বোঝা গেল না । খুবই ছোট । নামটাও খালের নামে আলীপুর খাল । দুই-তিনটা ফেরী পাশাপাশী রাখলেই মনে হয় এটা পার হওয়া যেত । তারপরেও এটা একটা ফেরীতেই পার হতে হল । আমাদের মত করে কে আর ভাবে ? কুয়াকাটা পৌছালাম সকাল ১০ টায় । উঠলাম কুয়াকাটা ইনে। ভাল হোটেল । সবার পেট চোঁ- চোঁ করছিল । লাগেজপত্র হোটেলে রেখেই বেড়িয়ে পড়লাম সকালের নাস্তা করতে । সেখানে একটা কান্ড ঘটে গেল । সেটা না হয় আরেক পর্বেই বলি । বাকিটুকু পড়ুন...

কুয়াকাটা-০২

[১] কুয়াকাটায় কক্সবাজার বা সেন্টমার্টিনের মত এত ওয়েভ নাই যে ঢেউয়ের তালে তালে নাচা যাবে । আমরা ছয়জন তাই কোমড় পানিতে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে খোশগল্প করছিলাম । অধিকাংশই বয়সের দোষে কুশীল আলাপ । এমন সময়ই ভদ্রলোকটির সাথে আমাদের দেখা । সমুদ্রের পানিতে সাঁতরাচ্ছেন আর আমাদের কি জানি বলছেন । কথা ভালমত বোঝাও যাচ্ছে না । শুধু একটাই বুঝলাম হোয়ার ফ্রম ইউ ? আমরা বললাম উই আর ফ্রম ঢ্যাকা । ইউ । তিনি বললেন আই অ্যাম ফ্রম সাইপ্রাস,হ্যাভ ইউ হারড দা নেইম সাইপ্রাস ? সাইপ্রাসে উচ্চশিক্ষার ফেরী করে বেড়াচ্ছে ঢাকার নানান এজেন্সী । পত্রিকা খুললেই বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে "হায়ার ষ্টাডিস ইন সাইপ্রাস "। পড়াশুনা জাননেওয়ালা লোকের তাই সাইপ্রাস শব্দটা না শুনে উপায় নাই । আমরা তাই বলি ইয়েস উই হ্যাভ । মিশ্রিপাড়ায় গৌতমের মূর্তিমিশ্রিপাড়ায় গৌতমের মূর্তিভদ্রলোক এবার আমাদের কাছে আসেন । নানান আলাপ জুড়ে দেন । অধিকাংশই সাইপ্রাসের আলাপ ,ভূমধ্যসাগরের আলাপ । সাইপ্রাস ইজ এ ভেরী নাইস কান্ট্রি নট ক্রাউডেট লাইক দিস কান্ট্রি । এইসব আলাপ আর কি ? আমাদের মেজাজ খারাপ হয় । শালা সাইপ্রাসের গুন গাইতাছস গা , বাংলাদেরশের নিন্দা করছ কির লাইগা ? কথাপ্রসঙ্গে তিনি বলেন আর ইউ স্টুডেন্টস ? আমরা বলি ইয়েস। ফ্রম হয়ার? আমাদের একজন বলে বুয়েট। সে আরও বলে হ্যাভ ইউ হার্ড দিস বিফোর , দিস ইজ বাংলাদেশ ইউনিভারসিটি অব ইন্জিনিয়ারিং টেকনোলজী । ও ইয়া আই হ্যাভ হার্ড দিস ,ইট ইজ বিসাইড ডিএমডিএইচ(ডিএমসি বোঝাইতে চেয়েছে বোধহয়)। আমরা খুশি হই । যাক অন্তত একজন বিদেশীর দেখা পাওয়া গেল যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে চেনে । বিদেশে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালের যে ভাবমূর্তি ! সেদিন চার হাজার টপ লিষ্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা তালিকা দেখলাম । বাংলাদেশের শুধু একটাই বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেখানে । বুয়েট । সেটাও তিন হাজারের পর পরে । প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও কোন অস্তিত্ব নাই চার হাজারের মধ্যে ।যাই হোক ভদ্রলোকের সাথে কথা জমে উঠেছে । কথা জমবেই না কেন ? বিদেশ সম্বন্ধে আমাদের অসীম আগ্রহ আর প্রশ্ন । আমরা নানান প্রশ্ন করছি , তিনি উত্তর দিচ্ছেন আর আমরা ,আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে আমি বিশেষ লাইনে আলাপ জমানোর ধান্ধা করছি। বিশেষ লাইনটা কি নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না । এমন সময় ভদ্রলোক (না ভদ্রযুবক ,ইনার বয়স ত্রিশের মত হবে) আসল কথাটি পাড়লেন অ্যাকচুয়ালী আই অ্যাম এ বাংলাদেশী , লিভিং সাইপ্রাস সিন্স টু থাউজেন্ট ত্রি । নাউ ইন বাংলাদেশ ফর পাইভ অর সিকস মান্থস। আমরা মনে মনে ভাবি ও আচ্ছা ,এইজন্যই তুমি বাংলাদেশের নিন্দা কর এরপর তিনি পরিস্কার কুমিল্লার বাংলা বলা শুরু করলেন । ইনার উপর মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায় । অযথা ইংরাজী কওয়ার কি দরকার । আমরা কি বাংলা বুঝি না ? নাড়িভূরি নিংড়ে ইংরেজী কইতে কি সমস্যাই না হল এতক্ষন । এখন তো ভালই বাংলা বলছেন ।

সন্ধ্যায় এই লোকের সাথে বার দেখা হয় । বীচে সবাই মিলে ছাতার নিচে আর আরামকেদারায় শুয়ে গল্প করতে থাকি । একসময় ভদ্রলোকের সাথে সম্পর্কটা মাইডিয়ার টাইপ হয়ে ওঠে । কথা শুরু হয় মদ আর মেয়ে নিয়ে । আমরা জিগাই কি গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি ? তিনি বলেন হ্যাঁ । সাইপ্রাসের মেয়ে । ওরে ! কত শুটকি রে ।ওরে ! কত শুটকি রে । অতি উৎসাহী হয়ে তিনি তার গার্লফ্রেন্ডের একটা ভিডিও দেখান আমাদের । আমরা বলি ভালই তো । এরপর উনি আরও নানান জাতের মেয়েদের গল্প আমাদের শোনান । টার্কির মেয়েদের গল্প, পূর্ব ইউরোপের পিছনে ছিলমারা মেয়েদের গল্প কি নেই এতে । আমরা অবাক হই ,যারা অবাক হয় না (হয়ত দেশেই অনেক মেয়েদের সাথে দুএকজনের এটা-ওটা আছে!) তারা অবাক হওয়ার ভান করে । আহা! কি আরামেই না ইনারা আছেন । ভদ্রলোক এবার মদের আলাপ শুরু করেন। কতইনা মদের নাম আর কতইনা তার বাহার । আমাদের গলা শুকিয়ে ওঠার জোগার হয় । তিনি আমাদের কাছে জানতে চান কি বিয়ার-টিয়ার চলে নাকি ? আমরা গাঁইগুই করতে থাকি । হ্যাঁ , না , মানে চলে হালকা পাতলা । আমাদের মনে ক্ষীন আশা জাগ্রত হয় । সামান্য বিয়ার বুঝি আজকে গলায় শুটকি না দানবশুটকি না দানব জোটেই । আমরা আরো গল্প জাকিয়ে তোলার চেষ্টা করি । কিন্তু চাইলেই তো আর সব হয় না । আমাদের বিয়ার খাওয়ার আশায় গুড়োবালি দিয়ে এবং ছাতা-আরামকেদারার সামান্যটুকু বিল না দিয়েই তিনি কেটে পড়েন । তাকে নিয়ে বাকি সময়টা কুকথা বলেই কাটে আমাদের ।

[2] কুয়াকাটার আপ্যায়ন নামক রেষ্টুরেন্টটায় কেউ যদি একবার লটপটি খায় এটা স্বীকার করে নেয়া তার কর্তব্য হবে বলে মনে হয় যে এর চেয়ে কুখাদ্য সে সারাজীবনে খায় নি । অনেকে মনে করবেন বাড়িয়ে বলছি কিন্তু আমাদের ছয়জনের এই রেষ্টুরেন্টটায় খেয়ে এটাই মনে হয়েছে । সারারাত জার্নির পর সকালে হোটেলে পৌছেই লাগেজপত্র রেখে বেড়িয়ে পড়লাম ব্রেকফাষ্টের সন্ধানে। যে হোটেলে উঠেছি তার সামনেই একটা রেষ্টুরেন্ট দেখলাম "হোটল আপ্যায়ন" । দেখি বাহিরে চুলায় গরম গরম নান ভাজা হচ্ছে । পেটে সবার ক্ষুধা এত বেশি ছিল যে মনে হচ্ছিল আস্ত এক ডেকচি নান সাবার করে ফেলা যাবে । তাড়াতাড়ি রেষ্টুরেন্টে ঢুকে নান-লটপটির অর্ডার দিলাম । একজন দিল ভাত-মুরগীর অর্ডার। লটপটি-মুরগীর নামে যে খাদ্যবস্তু এল আমি হিসেব করে তার একটা প্রস্তুতপ্রনালী বের করেছি-

একটি ডেকচিতে (হোটেলের রান্না ,বিস্তর লোকজন খাবে ডেকচি তো লাগবেই)পানি নিন । সমুদ্রের পানি হলে ভাল হয় তাতে লবনের খরচটা খানিকটা বাঁচবে । এই পানিতে ফালিফালি করে আলু কেটে দিন যাতে গড়ে প্রতি বাটিতে দুই-তিন ফালা করে আলু পড়ে । এবার এতে লবন-মরিচের গুড়া-তেল-নূন-মসলা ঢালুন । এসব ঢালার সময় খেয়াল রাখবেন এদের পরিমান যেন খুব বেশী না হয় আবার এমন কমও না যে কেউ খেলে বুঝতে পারবে যে এসব কিছুই দেয়া হয় নি অর্থাৎ এমন পরিমান হবে যাতে খেয়ে বোঝা যাবে লাল কাঁকড়ার জন্য খোড়া হচ্ছেলাল কাঁকড়ার জন্য খোড়া হচ্ছেলবন-ঝাল-তেল জাতীয় জিনিসপত্র আছে কিন্তু স্বাদ বোঝা যাবে না । যাই হোক এরপর মিশ্রনটাকে উৎকৃষ্টরূপে জাল করতে হবে যাতে এটা হাল্কা গাঢ় হয় , খুব বেশী গাঢ় করার দরকার নাই জানেনই তো কাষ্টমার ঝোল বেশী খায় , বেশী গাঢ় করতে গেলে ঝোল কমে যাবে । এরপর স্পেসিফিক্যালি ঠিক করতে হবে আপনি কি রান্না করতে চাচ্ছেন । যদি ডিম রান্না করতে চান তবে ডিম সিদ্ধ করে খানিকক্ষন পিঁয়াজ-তেলে ভেজে লাল হয়ে উঠলে তৈরী করে রাখা ঝোলে ছাড়ুন । ব্যস হয়ে গেল ডিম রান্না । কাঁকড়া পাওয়া গেছেকাঁকড়া পাওয়া গেছে লটপটি রান্নার কষ্ট আরও কম । মুরগী ছেলার সময় খেয়াল রাখবেন নখগুলোও যাতে নেয়া হয় (খামাখা এটা ফেলে লাভ কি,কাষ্টমারই তো খাবে !)। নখগুলোর উপরের হাল্কা চামড়াও ছাড়ুন । এবার মুরগীর মাথা ,গলা,গিলা ,চামড়া এইসব মুরগী থেকে আলাদা করে নিন। এবার মৃদু আঁচে মুরগীর এই জিনিসগুলোকে ভাপিয়ে নিতে হবে । অযথা চুলার লাকরি খরচ করার দরকার নাই এজন্য । ভাত যখন রান্না করবেন তখন ভাতের উপর জিনিসগুলো দিয়ে দিন । ওতেই এগুলো আধাসিদ্ধ হবে । এবার আধাসিদ্ধ জিনিসগুলো আগেই তৈরি করে রাখা আলুর ঝোলটাতে দিন । ব্যস তৈরী হয়ে গেল মুরগীর লটপটি।

কেউ বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা এরকম রেসিপিরই একটা লটপটি আমাদের মনে হয় খেতে হয়েছিল আপ্যায়ন হোটেলে । খাওয়ার পর কেউ বলল বমি বমি লাগছে ,কেউ বলল সারা জিন্দেগীতে এর মত কুখাদ্য খায় নি । একটা বিষয়ে সবাই একমত হল যে আর যাই হোক না খেয়ে মারা যাবে সবাই তবুও ঐ রেস্টুরেন্টে আর খাবে না । দুপুরে খাওয়া হল ঐ হোটেলের পাশের হোটেলটায় । সেটাতে অবস্থা এত খারাপ না হলেও খুব একটা সুবিধার না । বাহিরে খাওয়া-দাওয়ার এত অসুবিধা বিধায় সিদ্ধান্ত হল আমরা যে হোটেলে উঠেছি ওখানেই খাই । ওখানে কয়েকবেলা খেতে-খেতে পকেটের এমন হাল হল যে ঢাকায় ফেরাই দুরূহ হয়ে পড়ল। ঐ হোটেলের মালিক নাকি জার্মানী থেকে ট্যুরিজমে পড়াশুনা করে এসেছেন । আসার সময় সাথে করে এনেছেন এক বাবুর্চি । নাস্তার বিল না অন্য কিছু !নাস্তার বিল না অন্য কিছু !মালিক মনে হয় বাবুর্চির বেতন পর্যটকদের খাইয়ে সেখান থেকে আদায় করার কথা ভেবেছেন । একজন খাওয়ার মত একবাটি ডাল বিশ টাকা , সবজী পঁচিশ টাকা । একটা পরাটা খাবেন সেটাও আট টাকা করে , চায়ের দাম দশ টাকা । সকালে ডিম-পরোটা-ডাল-চা নাস্তা করলেই বিল আসে সবাই মিলে পাঁচশ টাকার কাছাকাছি । আলুভর্তা-ডাল-ভাতের বিল সাড়ে চারশ পেরিয়ে যায় । মাছ-মাংসের কথা না হয় নাই বলি । ওগুলো হাজার টাকার নিচে পাওয়ার নয় । এই রকম বিল আর যাই হোক আমাদের মত বেকার ছাত্রদের খুব বেশীদিন দিতে পারার কথা নয় । হলও তাই । চার-পাঁচ বেলা খাওয়ার পর মনে হল এবার ক্ষান্ত হওয়া প্রয়োজন , না হলে সাথের জিনিসপত্র বিক্রি করে ঢাকায় ফিরতে হবে । অতপর অনেক খুঁজে-পেতে ,অনেকের কাছে শুনে একটা সস্তা এবং ভাল হোটেলের খোঁজ পাওয়া গেল । হোটেল আমতলী । এক বৃদ্ধ লোক হোটেলটার দেখাশুনা করেন , অপরিচিতদের "কাহা" বলে ডাকেন । কাহা কি খাবেন ?কাহা আর কিছু লাগব? এই হোটেলের খাবার বেশ ভাল এবং সস্তা । আগেরটার নাস্তার বিল দিয়ে এখানে দুপুর আর রাতের খাবার আমিষ সহযোগে খাওয়া যায় । আমরা থাকতেই বুয়েটের আরেকটা গ্রুপের দেখা হয় কুয়াকাটায় । ওদেরকেও আমরা এই হোটেলটিতে খেতে বলি । কুয়াকাটা থেকে ঢাকায় ফেরার সময় বরিশালে কয়েকঘন্টার জন্য যাত্রাবিরতি নিতে হয়েছিল । এখানে একটা খাবার হোটেল আছে "হোটেল নাজ গার্ডেন" । এখানকার মোরগ-পোলাও আর কাচ্চি বিরিয়ানীও বেশ ভাল । বাকিটুকু পড়ুন...

কুয়াকাটা-০৩

[১]মিশ্রিপাড়ায় গেছি বৌদ্ধমন্দির দেখতে । এত বড় গৌতমের মূ্র্তি নাকি বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই । দেখলাম , বেশ বড়ই মূর্তিটা । এরপর মিশ্রিপাড়ায় রাখাইনদের পাড়ায় একটু হানা দিয়ে একটা স্কুলের সামনে এসে পড়লাম । প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাস হাইস্কুল দুটোই একসাথে । আমরা স্কুলের সামনে দাড়িয়ে স্কুলটা দেখছিলাম আর খোশগল্প করছিলাম । এমন সময় ক্লাসরুম থেকে একজন শিক্ষক বেড়িয়ে আসেন । হ্যালো,আই আম এন এসিসটেন্ট ইংলিশ টিচার অব দিস স্কুল । আমরা কুয়াকাটায় সাইপ্রাসিয়ান বাংঙালি ভদ্রলোকের সাথে কথা বলে যেরকম অবাক হয়েছিলাম তার চেয়েও বেশী অবাক হয়ে পড়ি । ব্যাপার কি ? সবাই ইংলিশ কয় ক্যা? আমরা বলি ও , আচ্ছা । ভদ্রলোক এবার স্কুলের গুনগান গাইতে শুরু করেন। দিস স্কুল হ্যাজ এ গুড রেজাল্ট ইন এস,এস,সি এক্সামিনেশন । লাষ্ট ইয়ার এইট স্টুডেন্টস ফ্রম দিস স্কুল গট A+ অ্যান্ড টু অব দেম ওয়ার গোল্ডেন A+ । আমরা বলি ,ও আচ্ছা , বেশ ভাল রেজাল্ট তো । ভদ্রলোক এবার বলেন, ইউ ওয়ান্ট টু সী সামথিং মোর অব দিস স্কুল ? আমরা একটু ইতস্তত করি । না মানে ইয়ে ......। অবশেষে আমাদের মধ্যে একজনের আগ্রহে হ্যাঁ বলি । উনি আমাদের সাথে করে হাইস্কুলের একটা কামড়ায় নিয়ে যান । রুমে চার-পাঁচটি বেঞ্চ বসানো । এর মধ্যে সমকোনে রাখা দুটি বেঞ্চে বসে পাঁচ-ছয়জন ছাত্র পড়ালেখা করছে । ভদ্রলোক বলতে শুরু করেন । দিস স্টুডেন্টস উইল অ্যাপিয়ার ইন দ্যা জুনিয়র স্কলারশিপ এক্সামিনেশন দিস ইয়ার । আই অ্যাম ট্রাইয়িং টু টেক এক্সটা কেয়ার অব দেম এন্ড ট্রাইয়িং মাই লেভেল বেষ্ট । ইউ ক্যান টেষ্ট দিস স্টুডেন্টস । আমরা বলি , না , ঠিক আছে । কিন্তু ভদ্রলোক ক্ষাম্ত দেন না । প্রথম বাংলা শুনি এবার আমরা তার মুখে । এই ট্রান্সলেশন কর, আমি একজন ইন্জিনিয়ার হতে চাই ......। তিনি আবারো ইংরেজী শুরু করেন । ইউ ক্যান আস্ক দেম অ্যাবাউট দেয়ার এমবিশন অব দেয়ার লাইফ । আমাদের কথা বলার আগেই ছাত্রদের বলেন, টেল ইন ইংলিশ হোয়াট ইউ ওয়ান্ট টু বি ইন ইওর লাইফ । ছাত্ররা একজন একজন করে দাড়ায় আর বলে কে জীবনে কি হতে চায় । কেউ ডাক্টার হতে চায় , কেউ ইন্জিনিয়ার । ভদ্রলোক ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেন , দিস পিওপল আর ফ্রম বুয়েট এন্ড দে আর গোয়িং টো বি ইন্জিনিয়ার । ইফ ইউ ওয়ার্ক হার্ড ইউ ক্যান অলসো গো দেয়ার । ছাত্ররা মাথা নাড়ে । ইয়েস স্যার । আমাদের নিয়ে ভদ্রলোক বেড়িয়ে পড়েন । ইফ ইউ হ্যাভ টাইম ইউ ক্যান মিট আওয়ার হেডমাষ্টার । আমরা বলি , না ,ঠিক আছে , আজকে আর না । প্রাইমারী স্কুলটার মনে হয় টিফিন চলছিল । খোলা মাঠে অনেক ছাত্রছাত্রী খেলাধুলা করছিল । আমরা বলি , এসো তোমাদের সাথে ছবি তুলি । সবাই এরা ছবির জন্য দাড়িয়ে যায় । ডিজিটাল ক্যামেরার ক্লীক শুনেই সবাই দৌড়ে যায় অমরের কাছে । সেই ছবি তুলছিল । সবাই ছবি দেখতে চায় । সবাইকে ক্যামেরায় তোলা ছবি দেখিয়ে মুক্তি পেতে হয় ।

[২]বাহিরে কোথাও বেড়াতে গেলে সবাই মিলে টাকা-পয়সা দিয়ে আমরা একটা ডেটাবেস তৈরী করে নেই । যাতায়াতের ভাড়া ,হোটেল ভাড়া ,খাওয়া খরচ এইসব এই ডেটাবসে থেকেই দেয়া হয় । আর প্রতিবার এই ডেটাবসের ম্যানেজারের কাজটা আমাকেই করতে হয় । এবারও ম্যানেজার ছিলাম কিন্তু এবার দু-একটা ছোটখাট ঘটনা ঘটে গেছে এবং এ থেকেই বুঝে গেছি বয়স বাড়ছে , বুড়ো হয়ে যাচ্ছি । এধরনের ভুল সাধারনত বুড়োদেরই হয় ।

ঘটনা-১ : ফাতরা বনে যাব । নদী আর সাগরের একটা মোহনা পাড় হতে হয় ট্রলার দিয়ে । ট্রলার ভাড়া ঠিক হল ৩৫০ টাকা । ফাতরা বনে গিয়ে ট্রলারওয়ালারা ৫০ টাকা চাইল , চা-নাস্তা খাবে । দিলাম । ফাতরা বন থেকে ফিরে এসে ৩০০ টাকা দিতে হবে । খুচরা টাকা নেই , সব পাঁচশো টাকার নোট । ট্রলারওয়ালা একটা দোকানে নিয়ে গেল । দোকানদার ২০০ টাকা দিল ৫০০ টাকার নোটটা নিয়ে । আমরা ভ্যানে চড়ে রওয়ানা হলাম কুয়াকাটার দিকে । মিনিট ত্রিশেক হওয়ার পর পিছনে কার জানি উচ্চস্বরে ডাক শুনে দুটা ভ্যানই থামানো হল । দেখি সাইকেল নিয়ে ট্রলারওয়ালা এসে হাজির । বুঝলাম ঝামেলা আছে । হয়ত যে পাঁচশ টাকার নোটটা দিয়েছিলাম সেটা জাল । মাইর আজকে একটাও বোধহয় মাটিতে পড়বে না। ট্রলারওয়ালা অনেক জোরে সাইকেল চালিয়ে এসেছে । সে এসেই হাঁপাতে শুরু করল , আপনাদের মধ্যে কে টাকা দিল তখন । একজনকে দেখিয়ে বলল আপনি না । সেই একজনও বোধহয় ভয় পেয়ে গেল । সে বলল না আমি না । আমি তখন আর সরাসরি ট্রলারওয়ালাকে বললাম না আমি দিয়েছি টাকা তার বদলে বললাম কেন কি হয়েছে ? সে বলল টাকা তো দেননি । আমি আকাশ থেকে পড়লাম । কেন পাঁচশ টাকার নোট যে দেওয়া হ , দিয়ে দুইশ টাকা নেওয়া হল । না টাকা দেননি , দেখেন । আমি মানিব্যাগ বের করে টাকাগুলা গুনলাম । না আসলেই টাকা দেয়া হয় নি । একটা পাঁচশ টাকার নোট বেশী দেখা যাচ্ছে । ট্রলারওয়ালার কাছে মাফ-টাফ চেয়ে নোটটা দেয়া হল।

ঘটনা-২ : প্রতিটা বীচেই বীচের পাশে মনে হয় শামুক-ঝিনুকের দোকান থাকে । এখানেও আছে । পোলাপান সবাই মিলে হল্লা করে নানান জিনিস কিনল সেখান থেকে । আমিও দুয়েকটা জিনিস কিনব বলে দোকানে গেলাম । কি কিনি ? কেনার মত কিছুই না পেয়ে তিনটা ঝিনুকের মালা কিনলাম । এই মালা দেওয়ার মত কেউ নাই ,এমনকি ছোটবোনও নাই যে দেব । তারপরেও কেনা । দোকানে টাকা পয়সা দিয়ে মালার প্যাকেটটাও মনে হল নিয়েছি কিন্তু ত্রিশ-চল্লিশ পা যাওয়ার পর মনে হল আসলে প্যাকেটটা আমার কাছে নাই । সামনে সবাই দাড়িয়ে ছিল । এদের বললাম ঐ তোরা আমার প্যাকেটটা নিছস নাকি?

-কিসের প্যাকেট?

-ঐতো কয়েকটা জিনিস কিনছিলাম ঝিনুকওয়ালদের দোকান থেকে । ঐ প্যাকেটটা কি তোদের কাউকে দিছি । তোরাও তো আশেপাশে ছিলি ।

-কি কিনছিলি ? অনেকের প্রশ্ন । খাজনার চেয়ে বাজনা বেশী হলে যা হয় আরকি।

-ঝিনুকের মালা কিনছিলাম কয়েকটা ।

-কারে দিবি ? এর আগেও কক্সবাজার থেকে যে মালাগুলি কিনছিলি তার খবর কি? কারে দিসছ ?

-কাউরে দেইনি । আছে , আমার কাছেই আছে । বউরে দিমু । এবারের গুলাও বউরে দিমু ।

-বউতো নাই ।

-আরে ব্যাটা আজকে বউ নাই বইলা যে কালকে হইব না তার কি গ্যারান্টি । এত প্যাঁচাইতেছোস ক্যা ? মালা কাউরে যদি দিয়া থাকি তো ক ।

সবাই একসাথে হেসে ওঠে ।

- আর হইছে বউ । এহন পর্যন্ত প্রেমই করতে পারলি না..................। না আমাদের মালা দিস নি । ঐ দোকানেই আবার যা খুঁইজা দেখ ।

আবার মালার দোকানটাতে যাই । দোকানদারকে বলি ভাই দেখেন তো আশেপাশে খুঁজে । মালার প্যাকটটা মনে হয় নেই নাই । এখানেই কোথাও ফেলে গেছি মনে হয় । দোকানদার অনিচ্ছা সত্ত্বেও আশেপাশে খোঁজে । কোথায় আর থাকব , আপনে তো নিয়াই গেলেন । দোকানদার প্যাকেটটা আর খুঁজে পান না । দোকানদারের সাথে একজন লোক বসে ছিলেন । তিনিও বলেন তার নাকি স্পষ্ট মনে আছে আমি দোকান থেকে প্যাকেটটা নিয়ে বের হয়েছি । আমি মনে মনে বলি ভাই আমারওতো স্পষ্ট মনে আছে আমি প্যাকেটটা নিয়েই বের হৈছি । কৈ রাখলাম । পরীর আছর পড়ল নাকি ? প্যাকেটটা আর পাওয়া যায় না ।

নিজের খবর আর নিজে রাখতে পারছি না । বিশেষ কাউকে মনে হয় খুব দরকার ! বাকিটুকু পড়ুন...