দুটি বিদেশী পরমাণু গল্প

১।ক্যালিফোর্নিয়ার অগ্নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা দাবানলে পুড়ে যাওয়া বনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ করতে একাংশে আংশিক পোড়া মৃতদেহ দেখতে পায় । মৃত লোকটি ছিল ভেজা সাঁতারের পোষাক ,ফ্লিপার (সাঁতার কাটার জন্য তাড়নীবিশেষ) আর মুখোশ পরিহিত । পোষ্ট মর্টেম রিপোর্টে বলা হয় লোকটি আগুনে পুড়ে মারা যায়নি বরং মারা গেছে অভ্যন্তরীণ জখমের কারনে । তদন্তকারীরা তদন্ত করে উদঘাটন করেন আসল তথ্য। দুর্ঘটনার দিন লোকটি বন থেকে মাইলবিশেক দূরে সাগরে যায় সারফিং করতে । দমকল বাহিনীর লোকজন যত দ্রুত সম্ভবআগুন নেভানোর জন্য বিশাল বিশাল বাকেটওয়ালা (বড় বালতি জাতীয়) হেলিকপ্টার ব্যবহার করে । বাকেটগুলো দ্রুত ভরার জন্য সমুদ্রে ফেলা হয় এরপর বনে খালি করা হয় পানি ফেলে । বেচারা লোকের ভাগ্য এমন তার আশ্রয় হয় এমনই একটা বাকেটে । বেচারা! ২। আয়ারল্যান্ডের লোকেরা কৃপণ বলে বেশ খ্যাত । এমনি একজন ভাবি আইরিশ দম্পতির মধ্য কথোপকথন । স্ত্রী : তোমার মত কৃপণ লোককে বিয়ে করব না । এই নাও তোমার বাগদানের আংটি । পুং: আংটি না হয় দিলে কিন্তু আংটির কেসটা কোথায় । http://www.sachalayatan.com/guest_writer/15441 বাকিটুকু পড়ুন...

একটি খুনের স্বপ্ন : : অনেকদিন আগে পড়া একটি বই নিয়ে গল্প

সেদিন একজনের সাথে কথা হল । তিনি আমাকে বললেন গল্প -উপন্যাসের প্রতি তার কোন আগ্রহ নেই । সবই নাকি ফ্যান্টাসি লাগে । পড়তে ধরলেই নাকি মনে হয় এসবের কিছুই কখনো বাস্তবে হয় নি , বিশ্বাস করার কোন কারন নেই । গল্প নিছক গল্পই । আর আগ্রহ পান না পড়ার । এসব আর কি ? পরে আমি ওনার কথাগুলো নিয়ে ভাবতে থাকি । আসলেই কি এগুলো ফ্যান্টাসি ? বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে কি অত্যধিক মাত্রায় অনুভূতিপ্রবণও নয় । এরকম ভাবতে পারলে হয়ত সামান্য কিছু লাভ হতে পারত , অন্তত আমার ক্ষেত্রে । কিছু কিছু বই পড়ে যন্ত্রনাও পেতে হয় । যন্ত্রনাটা প্রখর হয়ে ওঠে যখন সেটা সাময়িক মানে দু -এক ঘন্টা না স্থায়ী না হয়ে কয়েকদিনব্যাপি স্থায়ী হয় । আজকে আমি সেরকম একটা বই পড়া বিষয়ক যন্ত্রনার কথাই বলব । আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি । হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে চারিদিকে প্রচুর হইচই হচ্ছে । আমিও এই হইচইয়ে যোগ দেই । নীলক্ষেত থেকে আজাদের যত বই আছে একে একে কিনে পড়ে ফেলতে থাকি । ওনার কবিতাগুলো ভাল লাগতে থাকে , মুগ্ধ পাঠক হয়ে উঠতে থাকি ওনার কবিতার । কিন্তু উপন্যাস যে দু একটা পড়ি (শ্রাবনের বৃষ্টিতে রক্তজবা , ফালি ফালি করে কাটা চাঁদ ) এগুলোকে একঘেয়ে মনে হয় । কেমন জানি উপমার বাহুল্যতা আর গায়ে পড়ে অশ্লীল কথাবার্তা শোনানোর মত মনে হয় উপন্যাসগুলো । কিছুতেই টানতে পারে না উপন্যাসগুলো । আজাদের উপন্যাস কিনবনা কিনবনা করেও একদিন আরেকটি কিনে ফেলি ," একটি খুনের স্বপ্ন" । একশো বিশ বাইশ পৃষ্ঠার ছোট একটি বই , ভালমত পড়তে তিন -চার ঘন্টার বেশী লাগার কথা না । উপন্যাসের ঘটনা তারচেয়েও সামান্য । সহজভাবে বলতে গেলে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের প্রেম কাহিনীর বর্ণনা । কিন্তু আজাদের হাতে এই সামান্য কাহিনীই অসামান্য হতে শুরু করে । প্রেমিকা সুফিয়ার জন্য নায়কের অনূভূতি , তাকে পাওয়ার আকুলতা সর্বোপরি নায়কের স্বাভাবিক জীবনযাপনে প্রেমিকার উপস্থিতি এবং তৎসংলগ্ন প্রভাবের বর্ণনা পড়ে আমি মুগ্ধ হতে থাকি । অনবরত বলতে থাকা উপমাগুলোকে আর অস্বাভাবিক বলে মনে হয় না । বইয়ের অর্ধেক অংশজুড়ে এই রোমান্টিসিজমের পর ঘটনা একটু অন্যদিকে মোড় নেয়া শুরু করে । স্বাভাবিক পাঠকমাত্রই বুঝতে পারছেন বিচ্ছেদ হবে আরকি ? কিন্তু আজাদ এই বিচ্ছেদের বর্ণনাটা দেন একটু অন্যভাবে । তোফাজ্জল নামক এক কথিত ভাইয়ের সাথে নায়ক পরিচয় করিয়ে দেয় প্রেমিকার । ধীরে ধীরে তোফাজ্জল চর্তুপাশ ঘিরে উঠতে থাকে সুফিয়ার । নায়কের অজান্তে যায় সুফিয়ার বাসায় , নানান ধরনের উপহার দিতে থাকে সময়ে অসময়ে । তোফাজ্জল আর সুফিয়ার মধ্যে গড়ে উঠতে থাকে আরেকটি সম্পর্ক । নায়কের বুঝতে প্রথমে একটু অসুবিধা হলেও একদিন সে সরাসরি বুঝতে পারে । বুঝতে পারে একদিন সকালে তোফাজ্জলের বাসায় । আজাদের বর্ণনা অনুযায়ী উদ্ধৃতি আমি নিঃশব্দে ভিতরে ঢুকে প্রথমে অন্ধ হয়ে যাই , তারপর আমার চোখে আলো জ্বলে ওঠে , অন্ধকার থেকেও যা উজ্জ্বল , মহাবিশ্ব ভেঙে পড়ার পর দেখা যাবে যে -আলো ,আমি তাদের কাছে এগিয়ে যাই ; বিকট সিল মাছের মত কালো নগ্ন তোফাজ্জল ভাইয়ের আবর্জনাস্তূপের মতো দেহের ওপর একটি পা রেখে নগ্ন সুফিয়া ঘুমিয়ে আছে , সিলটি পড়ে আছে লাশের মত সুফিয়ার মুখটি পূর্ণিমার চাঁদের মতো জ্বলছে , সরস্বতী ও অসুর জড়িয়ে আছে একে অন্যকে , দুজনেই গভীর ঘুমে নিমজ্জিত , হয়ত একাধিক সঙ্গমের তারা ক্লান্ত সুখনিদ্রায় লুপ্ত হয়ে আছে , জেগে উঠে আবার সঙ্গম করবে পশু ও সুন্দরী । এরপর নায়ক একটি খুনের স্বপ্ন দেখা শুরু করে , যা সে দেখতে পায় স্বপ্নে । প্রথমে সে বিব্রত বোধ করা শুরু করে ভয়ও পায় খানিকটা কিন্তু পরে সে এটাকে একটা অর্পিত দায়িত্ব ভাবা শুরু করে যেন অবশ্যই পালন করতে হবে । নায়কের মাথায় একটি স্বপ্ন জেগে থাকে - একটি খুনের স্বপ্ন । আমি উপন্যাসটি পড়া শেষ করি । আমার প্রচন্ড আক্রোশ তৈরী হতে শুরু করে তোফাজ্জলের উপর , সুফিয়ার উপর। কিছুই ভাল লাগে না । আমি বারবার নিজেকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করি আরে এটাতো সামান্য একটা উপন্যাসই , লেখকের মনে হয়েছে লেখক লিখেছে । কিন্তু সান্ত্বনায় কোন কাজ হয়না । আমি বারবার ভুলে যেতে থাকি এটা একটা উপন্যাস । আমার মনে হতে থাকে নায়কের চরিত্রে আমি দাড়িয়ে আছি । নগ্ন সুফিয়া সামগ্রিক ঐশ্বরিক সৌন্দর্য নিয়ে বাহুবন্ধনে পড়ে আছে তোফাজ্জলের । আমার রাগ বাড়তে থাকে । রাগ বাড়তে থাকে তোফাজ্জলের উপর , রাগ বাড়তে থাকে সুফিয়ার উপরও । আমি পলাশী বাজারে যাই , চা খাই । সেসময় সিগারেট খেতাম না কিন্তু সিগারেটও ধরাই একটা । একটা যন্ত্রনা আমার মাথার মধ্যে কাজ করে । আমি যন্ত্রনাটাকে সরাতে চেষ্টা করি কিন্তু এটা মাথার মধ্যে গেড়ে থাকে আরো দু তিনদিন । অজান্তে আমিও একটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করি , নিতান্ত ছেলেমানুষি স্বপ্ন - একটি খুনের স্বপ্ন ।(এটা লেখাটা নিতান্ত মাত্রাতিরিক্ত আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয় , পাঠকদের বলে নিলাম । বই পড়ার মধ্যে যে একটা যন্ত্রনা আছে সেটা সেই কয়েকদিন বুঝেছিলাম ) http://www.sachalayatan.com/guest_writer/15439 বাকিটুকু পড়ুন...

অন্যরকম গল্প : : আগুন্তকে আপত্তি

রাতুলের বাবার কথা: রাতুল অর্ন্তমুখী স্বভাবের ছেলে এটা আমরা জানি । ও একা একা থাকতে চায় , আমরা বেশী কথাবার্তা বলতে চাইলে বিরক্তবোধ করে । এজন্য আমরা ওকে কম ঘাটাই । কিন্তু এবার ঢাকা থেকে গরমের ছুটিতে বাসায় আসলে ওকে কেমন যেন অন্যরকম লাগে , আমাদের সাথে কথা বলা আরও কমিয়ে দেয় । আগে বাসায় এসেই নিয়মমাফিক পড়াশুনা চালু রাখত । ওর আম্মা বলত ঢাকায় তো মেসে পড়াশুনা করই , এখন বাসায় আসছ একটু রিলাক্স কর , বাহিরে বেড়াও,বন্ধু-বান্ধবদের সাথে দেখা কর । কিন্তু ও যেত না । এবারের ব্যাপারটা কেমন জানি অন্যরকম । পড়াশুনা করে না , টিভিও দেখেনা , সারাদিন রিডার্স ডাইজেস্টের কতগুলো পুরানো সংখ্যা নিয়ে পড়ে থাকে । ওকে দেখলেই মনে হয় ভিতরে ভিতরে বেশ অস্থির একটা ভাব ,অসংলগ্ন কথাবার্তাও বলে মাঝে মাঝে । শুনলাম ওর মার সাথেও নাকি খারাপ ব্যবহার করেছে সেদিন । আমি একটু আশ্চর্য হই । ও বরাবরই ভদ্রগোছের একটা ছেলে । আমাদের সাথে শেষ কবে গলা উচু করে কথা বলেছে তা আমার মনে পড়ে না । আমি রাতুলের হঠাৎকরে এরকম পাল্টে যাওয়াতে আশ্চর্য হই , দুঃচিন্তাও হয় বেশ । সামনে এইচ,এস,সি পরীক্ষা ,রেজাল্টটা খারাপ হয়ে গেলে তো মেডিকেলে ভর্ত্তি হতে সমস্যা হবে। ওর মাকে আমি জিজ্ঞাসা করি কি ব্যাপার কোন সমস্যা হয়েছে নাকি । উঠতি বয়সের ছেলেদের প্রেম বা মেয়ে বিষয়ক সমস্যা থাকে সেরকম কোন সমস্যা হল কিনা , ঢাকায় মেসে নানান ধরনের ছেলেদের সাথে থাকে ওখানেও সমস্যা হতে পারে এগুলোই বলি ওর মাকে । ওর মা বলে না তেমন কোন সমস্যা মনে হয় নেই ,সব ঠিক হয়ে যাবে । আমার কেমন জানি মনে হয় ওর মা কিছু একটা এড়িয়ে যাচ্ছে । আমি ঢাকায় রাতুলদের মেসে ফোন করি , কথা বলি ওর রুমমেটের সাথে । ছেলেটা বলে না আংকেল এখানে কোন সমস্যা হয় নি । পাশের বাসার বদরুল ছেলেটা বয়সে ওর থেকে কয়েক বছর বড় হলেও দেখি রাতুলের সাথে ওর বেশ মিল । আমি বদরুলকেও জিজ্ঞাসা করি কি রাতুল কিছু বলেছে কিনা । এ ছেলেটার কাছেও তেমন কোন সদুত্তর পাই না । আমি এবার আসলেই দুঃচিন্তায় পড়ে যাই , সমস্যার কারন খুঁজে না পেলে সমাধান করি কিভাবে । তাছাড়া আমার সাথে ওর আলাদা একটা দূরত্ব আছে হুট করে জিজ্ঞাসাও করতে পারিনা মেয়েঘটিত কোন সমস্যা কি না । রাতুলের মায়ের কথা : রাতুল এবার ঢাকা থেকে আসার পর ওকে কেমন জানি অন্যমনস্ক লাগে । খেতে ডাকলে ঠিকমত আসে না , বলে টেবিলে সাজিয়ে রাখেন পরে খেয়ে নেব । কথাবার্তা কিছু জানতে চাইলে আগে তবু হা -না করে উত্তর চালিয়ে দিত কিন্তু এখন দেখি প্রশ্নটাও অগ্রাহ্য করে , দু-তিনবার জিজ্ঞাসা করলে তবে উত্তর দেয় । আমি বুঝতে পারি ওর কোন একটা সমস্যা হয়েছে , হঠাৎকরে ওর এরকম পাল্টে যাবার কথা নয় । ওর বাবাও বিষয়টা বুঝতে পারে আমার কাছে জানতে চায় । আমি রাতুলকে বারবার জিজ্ঞাসা করি কোন সমস্যা হয়েছে কিনা । ও বলে না কিছু হয়নি । আমি পিছু ছাড়ি না । কয়েকদিন অনবরত জিজ্ঞাসা করার পর ও সমস্যাটা আমাকে বলে । কথাটা বলতে ও একটু ইতস্তত করছিল । আমি ওকে বলি ও যেকোন কথা নির্ভয়ে বলতে পারে। এরপর রাতুল যে কথাটা বলে তাতে আমি খানিকটা বিস্মিত এবং খানিকটা লজ্জিতও হই । ও বলে "আপনারা যে নতুন বাচ্চা নিচ্ছেন এটা আমার পছন্দ না " । আমি লজ্জিত হয়ে পড়ি , কি বলব বুঝতে পারিনা । আমি বলি ছি বাবা-মার মধ্যে সন্তানদের এসকল বিষয়ে আসা ঠিক না। একটা মেয়ে সন্তানের স্বপ্ন আমার বহু দিনের । রাতুল হওয়ার পর থেকেই আমি স্বপ্নটা দেখতে শুরু করি । সন্তানও নিয়েছিলাম একটা আমরা এর কয়েক বছর পর । একটা ছেলে হয়েছিল আবার । কিন্তু ছেলেটা মাসদুয়েকের বেশী বাঁচে নি । এরপর চাকুরী , রাতুলকে বড় করতে করতে সময় কেটে যেতে থাকে । আমার আর রাতুলের বাবার বিয়ে হয়েছিল খুব অল্প বয়সে তখন আমরা সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি । আমি তৃতীয় বর্ষে পড়তেই রাতুল জন্মগ্রহন করে , আমি তখন বাবারও বাড়ীতেই থাকি । তাই সবসময়ই আমি ভাবতাম নতুন একটা সন্তান নেবার সময় এখনও আছে। এখন যখন আমরা আরেকটা বাচ্চা নেবার কথা ভাবছিলাম তখন হয়ত আমাদের মনে রাখা উচিত ছিল রাতুল অনেক বড় হয়ে গিয়েছে , ওর কথা একবার ভাবা দরকার । আমাদের একটা ভুল হয়ে গেছে , মস্ত ভুল হয়ে গেছে । ওর বাবাকে আমি কথাটা বলতে পারিনি, এড়িয়ে গেছি।রাতুলের সামনে যেতে এখন আমার কেমন জানি একটা লজ্জা লাগে । রাতুলের কথা : ঘটনাটা আমি প্রথম শুনি ঢাকা থেকে গরমের ছুটিতে বাসায় ফিরে । ইন্টারমেডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষে কলেজে পড়াশুনার খুব চাপ বাসায় বলতে গেলে চার মাসে একবার আসা হয়। সামনে এইচ ,এস ,সির বাছাই পরীক্ষা , পড়াশুনা আরেকটু ভালোভাবে করার জন্যই হয়তোবা গরমের ছুটিটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিল । আমিও ভাবলাম ভালই হয়েছে ,এবার বাসায় গিয়ে চরমভাবে পড়াশুনা করতে হবে । বাসায় এসে ঘটনাটা আমি প্রথম শুনি বাসার কাজের মেয়ের কাছে । আম্মা- আব্বা অফিসে ,আমি বাসায় এসে সবে ফ্যানটা ছেড়ে ব্যাগটা খুলছি এমন সময় কাজের মেয়েটা বলে ভাইজান খবর শুনছেন , আফনার তো বইন হইব । আমি ভালই আশ্চর্য হই । আম্মা বাসায় ফিরলে দেখি ঘটনা সত্যই, আম্মার পেটটা বেশ ফোলা । আমার কেন জানি কান্না আসতে চায় , লজ্জায় আমি মিশে যেতে থাকি মাটিতে। আমি পড়াশুনা করতে চাই , মনোযোগ বসে না । নানান ধরনের অদ্ভুদ বিষয় নিয়ে ভাবতে থাকি আমি । এতদিন কারো সাথে প্রথম পরিচয়ে সে জানতে চাইত আমরা কয় ভাইবোন । আমি সবসময় বলতাম আমি একাই । এখন এরকম কাউকে বলতে হবে আমরা দুইজন , আরেকজন আছে সে ছোট , এখনও স্কুলে যায়না । বিষয়গুলো ভাবতে আমার মাথাটা কেমন জানি গুলিয়ে ওঠে , বাসার পরিচিত পরিবেশ অচেনা হয়ে ওঠে , খারাপ ব্যবহারও করি দু-একদিন আম্মার সাথে । আমার চোখে একটা ঘটনা ভেসে ওঠে । স্কুলে থাকতে আমার ফাজিল চাচাতো ভাই সাবেরএকদিন একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিল ওরা কয় ভাইবোন । ছেলেটা উত্তর দেয়ার পর সাবের বলেছিল আর কি দুই একজন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমি সাবেরের সাথে ছিলাম , ঘটনাটা দেখে আমি মুচকি হেসেছিলাম । সাবের বেশীদিন বাঁচে নি । এস,এস,সি পরীক্ষা দেওয়ার পর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল । কয়েকদিন হল আমার মনে হচ্ছে সাবের যেন আমার কাছে পিছে আছে । আমাকে সুযোগ পেলেই জিজ্ঞাসা করছে কি আর দুই একজন কি হওয়ার সম্ভাবনা আছে । আমার মনে হচ্ছে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি । http://www.sachalayatan.com/guest_writer/14820 বাকিটুকু পড়ুন...

অন্যরকম গল্প : : দূরত্ব

রাতুলের বাবার কথা : রাতুল ওর একটা নিজস্ব জগত তৈরি করে নিয়েছে । এখানে খুব একটা লোকজন নেই , আমি আর ওর মা তো মনে হয় নেইই । রাতুল আমাদের মন খুলে কিছু বলে না । আমরা যে কোন কিছু সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে হা-না বলে চালিয়ে নেয় , পারতপক্ষে কথা বলতেই যেন ওর আপত্তি । রাতুলের ব্যাপারে কোন কিছু জানার দরকার হলে প্রথমে আমি ওর মার কাছে জানতে চাই । আমার মনে হয় মার কাছে হয়ত এ বিষয়ে ও বলবে কিন্তু খুবই হতাশ হই যখন জানতে পারি ওর মা ও এ বিষয়ে কিছু জানে না ।আমি বুঝতে পারি ওর সাথে একটা দূরত্ব তৈরী হয়েছে। দূরত্ব সৃষ্টির ব্যাপারটা এমন যেটা একবার তৈরী হয়ে গেলে সহজে ভাঙা যায়না ,বিশেষত ও যখন আঠারো বছরের তরুন , কলেজে পড়ে । মাঝে মাঝে আমি রাতুলের সাথে আমাদের এই দূরত্ব সৃষ্টির ব্যাপারটা নিয়ে ভাবি , খুঁজে বের করার চেষ্টা করি কোথা থেকে এই দূরত্বটা সৃষ্টি হল । ওর মাকেও বলি বিষয়টা । সে বলে না কোথায় দূরত্ব তৈরী হয়েছে , ঠিকই তো আছে সবকিছু । কিন্তু আমি জানি এটা ওর মনের কথা না , মায়েরা কখনোই মনে করেনা সন্তান একটু দূরে সরে গেছে । আমার মনে হয় দূরত্ব সৃষ্টির এই ব্যাপারটা তৈরী হয়েছে ওকে কম সময় দেয়াকে কেন্দ্র করেই । আমরা স্বামী -স্ত্রী দুজনেই সরকারী চাকুরী করি , নয়টা পাঁচটা অফিস সেরে ওকে সেভাবে সময় দেয়া হয়নি। এসময়টা ও হয়ত স্কুলে গিয়েছে অথবা একা একা বাসায় থেকেছে । অফিস থেকে একটু শহরে ঘুরে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে যখন দেখতাম ও অসময়ে টিভি দেখছে তখন আমার মেজাজ একটু খারাপ হত । ও হয়ত ব্যাপারটা বুঝতে পারত । আমি আসলেই টিভি বন্ধ করে পড়ার টেবিলে চলে যেত । পড়ালেখায় বরাবরই ভালো থাকার কারনে আমি কিছু বলতাম না । আমার সাথে বরাবরই ওর কথা হত কম । ও মূলত আমার সাথে কথা বলত টাকার ব্যাপারে । শুধুমাত্র স্কুলের বেতন বা ব্যাচে প্রাইভেট পড়ার জন্য টাকার দরকার হলে আমার কাছে টাকা চাইত , হাত খরচের টাকা পর্যন্ত চাইত না । ক্লাস ফাইভে এইটে বৃত্তি পেয়েছিলো । ওই টাকা দিয়েই হাতখরচ চালাত মনে হয় । এখন আমার মনে হয় কিছু কিছু জিনিস ভুল হয়ে গেছে । ওকে পুরোপুরি ওর মত থাকতে না দিয়ে সময়ে অসময়ে একটু কথা বলা উচিত ছিল আমার । হয়ত ও যখন টিভি দেখছিল তখন গিয়ে এর পড়ালেখার খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল , স্কুলের কোন স্যার কেমন , সামনে ওর জন্মদিনে বন্ধুবান্ধবদের ও বাসায় দাওয়াত দিতে চায় কিনা এসব হাল্কা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা উচিত ছিল । মফস্বল শহরে ছেলেদের দল বেঁধে খেলাধুলা করতে দেখি বিকেলে । রাতুল ওসবে গিয়েছেও খুব কম । অবশ্য আমারও এখানে একটা দোষ ছিল আমিই যেতে দেইনি। কত খারাপ ছেলেই তো আছে কার সাথে মিশে কখন কোন পথে যায় । এখন বুঝতে পারি ব্যাপারটা খুব একটা ভাল হয়নি । ওর বয়সের ছেলেদের সাথে ওর মেশা উচিত ছিল , ভালোভাবেই মেশা উচিত ছিল । এতে হয়ত আমাদের সাথে ওর কথাবলার জড়তাটুকু কেটে যেত । রাতুলের মার কথা : রাতুলের বাবা মাঝে মাঝে আমার কাছে রাতুলের নানান বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে । আমি উত্তর দিতে পারিনা । ওর সাথে আমার কথাই হয় কম । বাসায় থাকলে হয় ও পড়াশুনা করে নাহয় টিভি দেখে । অফিসের অনেকের কাছে শুনি তাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করতে চায় না , নানান বায়ানাক্কা করে । কিন্তু রাতুলকে কখনও পড়াশুনার কথা বলতে হয়নি । হাইস্কুলে থাকার সময়েও ও খাওয়া , ঘুম , স্কুল , স্যারদের কাছে ব্যাচে পড়তে যাওয়া খুবই নিয়মমত প্রায় রুটিনমাফিক করত । আমি আশ্চর্য হতাম এত কম বয়স থেকে এই ছেলে এরকম নিয়মকানুন শিখল কোথা থেকে । আমারও ওর এ বিষয়গুলো ভাল লাগত , তাই আমিও ওকে ওর মত থাকতে দিতাম । রাতুলের বাবা মাঝে মাঝে বলে ওর সাথে নাকি আমাদের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে । আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারি কিন্তু হেসে উড়িয়ে দেই , আমিও সায় দিলে লোকটা হয়ত মনে মনে কষ্ট পাবে । যদিও আমিও জানি রাতুলের সাথে আমাদের আসলেই একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে । রাতুলের কথা: কলেজে অনেকে আমাকে মেশিনম্যান নামে ডাকে । একবার আমি একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম মেশিনম্যান কি ? সে হেসে জবাব দিয়েছিল যন্ত্রমানব । আমি বুঝতে পারিনি কেন ওরা আমাকে এ নামে ডাকে । অনেকদিন পর একজন আমাকে বলেছিল আমি নাকি যন্ত্রের মত রুটিনমাফিক সবকিছু করি । নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাসে আসি , নির্দিষ্ট সময়ে কলেজ থেকে ফিরি ,যন্ত্রের মত স্যারদের লেকচার তুলি পাশের ছাত্রের সাথে কোন কথা না বলেই, অন্যদের সাথে কথাও বলি মেপে মেপে প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া বলতে চাই না । ওরা হয়ত ঠিকই বলে , নির্দিষ্ট একটা রুটিনের বাহিরে কেমন যেন এলোমেলো লাগে আমার । আগে মফস্বলে বাসায় থাকতেও এটা করতাম এখন ঢাকায় কলেজে পড়তে এসেও এটা করি । বাসায় থাকতে আম্মা পছন্দ করতেন এটা । পাশের বাসাতে গিয়ে গল্প করতেন আমাকে নিয়ে , রাতুল তো পুরো রুটিনমাফিক চলে , রুটিনের বাহিরে একপা ও যেতে চায় না । বাসায় আমার তেমন কিছু করার ছিল না । অনেকের বাসায় ভাইবোন থাকে একসাথে সবাই মিলে হল্লা করতে পারে কিন্তু আমাদের বাসায় দিনের বেলায় বলতে গেলে লোক থাকত দুইজন । একজন আমি আর একজন কাজের বুয়া । বুয়ারা অধিকাংশই থাকত দেশ থেকে আনা স্বামী পরিত্যক্তা বয়স্কা মহিলা । এরা বাসায় থাকার পরিবর্তে হাতের কাজ সেরে পাশের বাড়ীতে গিয়ে গল্পগুজবেই ব্যস্ত থাকত । ফলে অধিকাংশ সময়েই খালি বাসায় একলা থাকতে হত আমার । স্কুলে গিয়ে আমি শুনতাম ক্লাসের ছেলেরা নানান বিষয়ে আলাপ করত । সরকারী কলেজে একটা বড় পুকুর ছিল ওখানে ভরদুপুরে সাতরাত ওরা , বিভিন্ন এলাকায় দল বেঁধে ক্রিকেট খেলতে যেত , অখিলবাবুর বড় আমবাগানে চুরি করে খেত লিচু, নারকেল ,আম ইত্যাদি । আমি ওদের কখনো যেতাম না , বলা যেতে পারে যেতে ভয় পেতাম যদি আব্বা জানতে পারে। একবার ক্লাস সিক্সে থাকতে আমি কলেজের বড় মাঠটাতে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলাম বাসার কাজের বুয়াকে না বলে । আব্বা কি জানি কাজে অফিস থেকে বাসায় এসে আমাকে না পেয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মাঠে । বাসায় ফিরে রান্নাকরার একটা কন্চি দিয়ে মেরেছিলেন খুব । বাসায় আম্মা ছিলেন না । আমাকে উদ্ধার করতে কেউ আসেনি সেদিন। আমার সাথে সেদিন যারা মাঠে খেলছিল ওরা আমাকে আব্বা মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন দেখে খুব অবাক হয়েছিল , সম্ভবত ভয়ও পেয়েছিলো একটু । আমাকে আর কখনও খেলতে ডাকেনি ওরা। সেই থেকে আব্বাকে আমি প্রচন্ড রকম ভয় পাই । পারতপক্ষে পরতে চাইনা আব্বার সামনে । আব্বাও দেখি আমার সাথে কথা বলেন কম । অন্য বাবারা দেখতাম আমার বাবার থেকে আলাদা । ঈদের নামাজে ছেলেদের একসাথে নিয়ে যান , মেলা টেলায়ও নিয়ে যান নিয়ম করে । অথচ আমি ঈদের নামাজে যেতাম পাশের বাসার বদরুল ভাইয়ের সাথে , মেলার সময় আমার হাতে বাবা গুজে দিতেন বিশ টাকার একটা নোট । আমি ভাবতাম বাবা এমন কেন ? কিন্তু আমার বোধ একদিন পাল্টে । ঢাকায় পড়তে আসার সময় আব্বা আমার সামনে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন । আমি অবাক হয়ে যাই , এতটা ভালবাসা আব্বা কোথায় রেখেছিলেন এতদিন । মানুষ কতভাবে নিজেকে খোলসের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলে ভাবতে থাকি আমি । ছুটিছাটায় বাড়িতে গেলে সবাই নাকি আব্বা-আম্মা -ভাইবোনের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেয় । ঢাকায় এসে গল্প করে মেসে । আমি পারিনা ওদের গল্পে অংশগ্রহন করতে। বাসায় গেলে আব্বা আমাকে কিছু গতানুগতিক প্রশ্ন করেন আমিও হা-না করে উত্তর দিতে থাকি । আমি জানি আমার সাথে পিতামাতার একটা দূরত্ব আছে , আমি ভাঙতে চেষ্টা করি দূরত্বটা , পারিনা। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/14793 বাকিটুকু পড়ুন...