নগরপিতার কাছে আমাদের আবেদন

শ্রদ্ধেয় নগরপিতা , এই শহরে আমরা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছি আমরা আমাদের অপসারণ চাই । চারদিকে নীরব বিপ্লবের আস্ফালন আজ পোশাকে-আশাকে, শিল্প -সংস্কৃতিতে ,রাজনীতি - বলনীতিতে আমরা খাপ খাওয়ানোর ও অযোগ্য বড়ই। রুপালি পর্দায় সোনালী শরীর ছোট পর্দায় চল্লিশোর্ধ মহিলার যৌবন রিকশারোহী তরুণ- তরুণীর চুম্বন তরুণ কবির খাদ্য গাজাঁ আর্ট ফিল্মের কামজ শরীর ক্রমাগত শরীরের সাথে সেটে যাওয়া পোষাক প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবিদের বক্তৃতা বিক্রি করে কেনা খাবার আমরা আর সইতে পারছি না নগরপিতা। আইন করে খাওয়া বন্ধ করে করলেন তামাকের ধোঁয়া অথচ শহরময় ধোঁয়ার গতি হল না কোন। নগরপিতা আমরা পরাজিত , নব্য যাজকেরা নষ্ট করেছে আমাদের ধর্ম সাধের সমাজতন্ত্র- সেটাও পরাজিত কম্যূনিষ্টদের কাছে সত্যিই খাপ খাওয়াতে পারছি না আর আমরা আমাদের অপসারণ চাই। বাকিটুকু পড়ুন...

একটি অসমাধাকৃত ছিনতাই (বাস্তব)

২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। পলাশী থেকে যাত্রা শুরু করলাম । উদ্দেশ্য মধুবাগ ,এক ছাত্রীকে পড়াতে যেতে হবে । কোন রিকশা নাই । পলাশীতে অনেক সময় রিকশা পাওয়া যায়না , ভাবলাম একটু হাঁটি নীলক্ষেত পর্যন্ত যাই। নীলক্ষেতেও দেখি কোন রিকশা নাই । কি মসিবত। হেঁটে আবারও শাহবাগ পর্যন্ত এলাম ,দেখি ওখানে কি অবস্থা । তখন সদ্য মফস্বল শহর থেকে এসেছি , হাঁটাহাটি কোন বিষয় ছিলনা। শাহবাগে এসে শুনলাম রিকশা ধর্মঘট , সারা শহরে রিকসা চলাচল বন্ধ । কি বিপদ , এখন কেমনে যাই। একবার ভাবলাম হলে ফিরে যাই এতদূর কষ্ট করে যাই কিভাবে । পরে ভাবলাম শাহবাগ পর্যন্ত যখন এসেছিই দেখি হেঁটেই যাই আজকে , পায়ের যা হবার হবে । যা ভাবা তাই কাজ । শাহবাগ থেকে রমনা ,শিল্পকলা একাডেমি, কাকরাইল হয়ে পৌছালাম কর্নফুলী গার্ডেন সিটির সামনে । তখনই ভদ্রলোকটির(!) সাথে আমার দেখা । আমি দ্রুত সামনে যাচ্ছি উনি ডাকলেন এই যে ভাই ।আমি পিছনে ফিরে চাই। -পায়ে লাগল সরি বললেন না। আমি ভাবলাম কি ব্যাপার পায়ে লাগল কখন ? আচ্ছা ভুল করে লাগতে পারে ,দ্রুত হাটছিলাম । আমি বলি -ও পায়ে লেগেছে নাকি ! সরি আসলে আমি খেয়াল করি নাই। ভদ্রলোক আমার দিকে এগিয়ে আসেন । হাতে হাত মেলান। -আপানার নাম। -কায়েস। -কৈ যাবেন। -মধুবাগ যাব। -থাকেন কৈ ,কি করেন। -পলাশী থাকি। বুয়েটে পড়ি ,ওখানে হলে থাকি। -ও আচ্ছা । আপনার মোবাইলটা একটু দেবেন । একটা জরুরী কল করা লাগত । আমি ভাবি ভদ্রলোক যখন বিপদে পড়েছেন দেই মোবাইলটা। তাছাড়া তখনও সদ্য মফস্বল আগত আমি জানতাম না এই শহরে মানুষ রাস্তাঘাটে কত ফিকির নিয়ে ঘোরে। আমি মোবাইলটা এগিয়ে দেই। লোকটি মোবাইল নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখে । আমার সন্দেহ হয় । অবচেতন মন থেকে কে যেন বলে মোবাইলটা নাও ,এই লোকের উদ্দেশ্য ভাল না। ওসময় মাথা ঠিক ছিলনা । আমি তাই যা-তা বলি ,ভাই একটা নাম্বার আছে দেন ওটা ডিলিট করেই আপনাকে দিচ্ছি। লোকটা প্রথমে একটু ইতস্তত করে । আমি আরেকটু জোর করলে উনি দিয়ে দেন । আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকি । উনি বলেন মোবাইল দেন । আমি বলি না ভাই মোবাইল দেয়া যাবেনা। এবার পাশ থেকে আরেকজন লোক আসে । লোকটা বলে- -আমাদের ভাই মোবাইল চাইছে আর তুই দিলি না । এনারে চিনস । সেভেন মার্ডার বিপু বললে এনারে সবাই চেনে । মোবাইলটা দে ।লোকটা আমার হাতটা সেভেন মার্ডারের কোমড়ে ধরে । ওখানে পিস্তল টাইপ একটা জিনিস অনুভব করি। কিন্তু আমিও তখন মফস্বলের গোঁড়ার তরুন। এত লোকের মাঝে মোবাইল নিবা , এত সোজা , দেখি কি কর তোমরা ।সেভেন মার্ডার এবার ভাষার ভদ্রতা হারান। -তোরে এখানে কেউ মাইরা রাখলে কেউ দেখব । চিল্লাবি চিল্লা দেখি। দেখ কেউ আসে কিনা । এই এরে ধর নিয়ে যাই চিপায়। শালার হাত পা আজকে ভেঙে দেওয়া লাগবে ।ঐ সময়ে ১৮ বছরের একজন তরুনকে ভয় দেখানোর জন্য এটা যথেষ্ট ছিল (এখন হলে তো সরাসরি দিয়েই দেব!)। কিন্তু কেন জানি ঐ সময়ে আমি গায়ার্তুমির চূড়ান্ত করি। -না মোবাইল দেওয়া যাবেনা। লোকটা কিছুক্ষন আমাকে দেখে । ওনার চোখে আমি অবিশ্বাস দেখি। এরকম ঘটনায় মনে হয় আর কখনো পড়েনি আগে। কি করবে বুঝে উঠতে কিছুক্ষন সময় লাগে তার। -দিবিনা। আচ্ছা যা । আর য্যান তোরে দেখিনা এ এলাকায়। আমি বিদাই হই । ছাত্রীকে গিয়ে বলি আগে এক গ্লাস পানি নিয়ে আস।এরপর আমি কয়েকজনকে ঘটনাটা বলেছি। অনেকে বিশ্বাস করেছে , অনেক ভেবেছে চাপা মারছি । কেউ বলেছে এত সাহস তোমার , ঘুমাও ক্যামনে রাতে। আমি কিছু বলিনি। মুচকি হেসেছি। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/14679 বাকিটুকু পড়ুন...

ধরা

মেয়েটাকে আমার দেখতে ইচ্ছে করে , এমন রিনরিন করে কথা বলে যেন মনে হয় কোথাও হাল্কা স্বরে বাশিঁ বাজছে। আমি বলি তোমাকে দেখতে চাই, সামনাসামনি কথা বলব। মেয়েটা হাসে, সামনাসামনি কথা বলতে হবে কেন , মোবাইলে তো কথা বলছিই। আমি নাছোরবান্দা , না একবার দেখা করি কি বল। মেয়েটা অবশেষে সম্মতি দেয়। আমার চেহারা কিন্তু খারাপ আপনি হতাশ হবেন। আমি মনে মনে বলি যার কথা এত সুন্দর সে দেখতে খারাপ হয় কেমনে। শুক্রবারে হেলভেশিয়াতে দেখা করার কথা বলি আমি। মেয়েটা বলে ঠিক আছে। আমি শিষ বাজাতে বাজাতে বাসায় ফিরি। শুক্রবারে হেলভেশিয়াতে যথাসময়ে সেজেগুজে হাজির হই আমি। বসে থাকতে হয় অনেকক্ষন। রাস্তাঘাটের যে অবস্থা ।মেয়েটা মনে হয় জ্যামে আটকা পড়েছে। ঘন্টাখানেক পর আমার বউ ঢোকে হেলভেশিয়াতে। আমার কাছে এসে বলে চল, বাসায় চল,অনেক হইছে। আমি আকাশ থেকে পড়ি। এতদিন কথা বলেও কন্ঠস্বর চিনতে পারলাম না। বন্ধুবান্ধবরা কি সাধে আর আবাল বলে আমাকে ! http://www.sachalayatan.com/guest_writer/14625 বাকিটুকু পড়ুন...

খুন হয়ে পড়ে রয়েছি রাস্তায়

অনেকদিন হল আমি খুন হয়ে পড়ে আছি রাস্তায় বর্ষার তুমুল ঝড়ে উড়ে যাচ্ছে আমার দেহাবশেষ যে স্বচ্ছ আকাশকে এতদিন ভালোবাসতাম সেই আজ মেঘ হয়ে উড়িয়ে দিচ্ছে আমাকে। খুন শুনলে তোমরা কেঁপে ওঠো খুনি ধরা পড়ুক, বিচার হোক এই তোমাদের প্রত্যাশা কিন্তু আশ্চর্য , আমি যে খুন হয়ে পড়ে আছি জানছে না কেউ, ছাপছেনা খবরের কাগজ হইচই হচ্ছে না কোথাও , কথা হচ্ছেনা মোড়ের চায়ের টেবিলে তবে কি মৃত আমি জীবিত আমির মতই অপাংক্তেয়। কে আমাকে হত্যা করল মানুষ থেকে কেড়ে নিল মনুষ্যত্ব কুকুর বানিয়ে ফেলে রাখল রাস্তায় একবারও জানতে চাইল না কেউ বর্ষার মোহন দুপুরে অপেক্ষায় থাকলাম মর্গের ভ্যানের অপেক্ষায় থাকলাম। বাকিটুকু পড়ুন...

পরমানুগল্প : : সিগারেট

লোকটি দেখি বেশ ক্ষেপে গেছে। আমি বললাম ভুল হয়ে গেছে ,আর হবেনা। কিন্তু তিনি দমবার পাত্র নন। এটিকেট জানেন না যেখানে সেখানে সিগারেট খেয়ে বেড়ান,পারলে মনে হয় আস্ত মুন্ডুটাই আমার উড়িয়ে দেন তিনি। আমি মনে মনে সিগারেটের জাত তুলে গালাগালি শুরু করি । শালার সিগারেট ,এর জন্য চলন্ত ট্রেনে পর্যন্ত মানুষের গালি খেতে হচ্ছে । ভদ্রলোক আরো কিছুক্ষন গজরিয়ে নিজের আসনে গিয়ে বসেন। আমার খুব বেশী দোষ ছিলনা। ট্রেনের দুই বগির মাঝখানে দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলাম আর খালি দরজার দিকে ধোঁয়া ছাড়ছিলাম , উনি যে এসময়ই নাযিল হবেন কে জানতে পেরেছিল। নিজের উপর বিরক্ত হয়ে আমিও সিটে গিয়ে বসি। ঘন্টাখানেক পর খাবার গাড়ি নামক ট্রেনে একটা বগিতে চা খেতে যাই। খাবার গাড়িতে কয়েকজন মাত্র লোক ছিল। একজনকে দেখি কাটলেট চাবাচ্ছেন আরাম করে। ওনার তৃপ্তিভরে কাটলেট খাওয়া দেখে আমারও খেতে ইচ্ছে করে। অর্ডার দিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসি। এসময়ই পিছনের দিকে ভদ্রলোকটিকে আবার দেখি। চা খাচ্ছেন ,হাতে সিগারেট। বেশ আরাম করেই খাবার গাড়িতে সিগারেট খাচ্ছেন ভদ্রলোকটি। বাকিটুকু পড়ুন...

মির্জা গালিব : : গালিবের একটি চিঠি

মির্জা গালিব, উর্দু ভাষার সেরা কবি, শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের সভাকবি। গালিব শুধু তার কবিতার জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না, বিখ্যাত ছিলেন তার বেপোরোয়া জীবনযাপনের জন্য, মদ, নারী আর জুয়ার প্রতি তীব্র আসক্তির জন্য। এই জিনিসগুলোকে গালিব শুধু জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশই মনে করতেন না , মনে করতেন কবি হয়ে ওঠার মাধ্যম, কবিদের শক্তি। একবার কেউ একজন তার সামনে সমকালীন আরেক কবি শাহবাই এর কবিতার প্রশংসা করলে তিনি বলে ওঠেন "কী করে শাহবাই একজন কবি হতে পারে ? সে কখনও মদ পান করেনি ,জুয়া খেলেনি, প্রেমিকার চটির আঘাত খায়নি, কিংবা একবারের জন্যও কয়েদখানায় যায়নি। গালিবের জন্ম ২৭ ডিসেম্বর ১৭৯৭ সালে আগ্রাতে। গালিবের প্রথম জীবন সম্বন্ধে সুনির্দিষ্টভাবে তেমনকিছু জানা যায়না, জানা যায়না তার পড়াশুনা সম্পর্কেও। ১৮৩০ সালে মাত্র তেরো বছর বয়সে গালিব বিয়ে করেন। বিবাহিত জীবনে সাত সন্তানের জনক হলেও তার একটি সন্তানও বাচেঁনি। এটা নিয়ে গালিবের একটা মর্মবেদনা ছিল এবং তার গজলগুলোতে তা ফুঁটে উঠেছে। আগাগোড়া দাম্ভিক একজন কবি ছিলেন গালিব বাহদুর শাহ জাফরের সভাকবি জওকের সাথে তার বিরোধ ছিল সমকালীন অন্যতম প্রধান আলোচনার বিষয়। গালিব সর্বদাই ভাবতেন জওকের চেয়ে উত্তম কবি হলেও তিনি সভাকবির পদ পাচ্ছেননা নিতান্তই সম্রাটের অদূরদর্শিতার জন্য যিনি নিজে একজন কবি ছিলেন এবং জওককে গুরু মনে করতেন, জওককে বসিয়েছিলেনও গুরুর আসনে সভাকবি বানানোর মাধ্যমে। কিন্তু গালিব কখনও ছেড়ে কথা বলেননি । বাহদুর শাহ জাফরেরপু্ত্র জওয়ান বখতের বিয়ের অনুষ্ঠানে বিয়ের অনুষ্ঠান বিবাদ শুরু হয় গালিবের কবিতার একটি লাইনকে কেন্দ্র করে যাতে তনি বলেছিলেন সমাবেশে এমন কোন ব্যক্তি নেই যে তার চেয়ে উত্তম কবিতা লিখতে পারে। এরকমই দাম্ভিক ছিলেন গালিব। এসময় একজন কবির মন্তব্য ছিল এরকম "কালাম-ই-মীর সমঝে আউর জুবান-ই মির্জা সমঝে মগর ইনকা কাহা ইয়ে খুদ হি সমঝে ইয়া খুদা সমঝে" সরলীকরন করলে দাড়ায় এরকম "আমরা মীরের(আরেক কবি) কবিতা বুঝি,আর মির্জার ভাষা বুঝি কিন্তু তাকে ( গালিব )- তার কবিতা শুধু তিনিই বোঝেন কিংবা হতে পারে শুধু আল্লাহ বুঝতে পারেন।" শেষপর্যন্ত অবশ্য সভাকবি হতে পেরেছিলেন গালিব কিন্তু তা জওকের মৃত্যুর পর ১৮৫৪ সালে। গালিবের মদ ও নারীপ্রীতির কথা আগেই বলেছি , নিচের পত্রটি পড়লে তা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। চিঠিটি তিনি লিখেছিলেন তার এক ঘনিষ্ট বন্ধুকে, বন্ধুর স্ত্রীর মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা চিঠির উত্তরে " মির্জা সাহেব আপনি যেভাবে দিন কাটাচ্ছেন তা আমি পছন্দ করতে পারছি না । আমার কামনাময় যৌবনের দিনগুলোতে একজন জ্ঞানী লোক আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন , 'ইন্দ্রিয়সম্ভোগে নিবৃতি আমি অনুমোদন করিনা , কামুকতাকে আমি নিষেধ করিনা । খাও, পান করো এবং খুশি থাক । কিন্তু একটা জিনিস মনে রেখ ,বুদ্ধিমান মাছি চিনির ওপরে বসে , মধুর ওপরে নয়। আমি সবসময় তার পরামর্শ অনুসারে কাজ করেছি। আরেকজনের মৃত্যুতে তুমি শোক আদায় করতে পারো না , যদিনা তুমি নিজের ওপর বেচেঁ থাকো । আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করো যে তিনি তোমাকে মুক্তি দিয়েছেন। আমি যখন বেহশতের কথা ভাবি এবং মনে করি যে আমার পাপগুলো যদি ক্ষমা করে দিয়ে আমাকে একজন হুরসহ একটি প্রসাদে স্থান দেয়া হয়, সেই মহিমান্বিত রমণীর সাথে চিরকাল কাটানোর জন্য আমার হৃদয় হতাশা আর আতংকে পূর্ন হবে। তাকে সেখানে দর্শন করা কী ক্লান্তিকর ও বিরক্তিকর - একজন পুরুষের বহন করার ক্ষমতার চাইতে অধিক বোঝা। আল্লাহ তাকে যাবতীয় ক্ষতি থেকে রক্ষা করুক - সেই একই পুরনো হুরি আমার বাহুবন্ধনে। একটু বোঝার চেষ্টা করো ভাই ,আরেকজন নাও। প্রতি বসন্তের শুরুতে একজন নতুন রমনী নাও কারন , গত বছরের হিসাব অর্থহীন বিষয়।" গালিবের মৃত্যু হয় ১৮৬৯ সালে ৭২ বছর বয়সে। --------------------------------------------------------- তথ্যসূত্র:[১]উইলিয়াম ড্যালরিম্পেল,The last Mughal[২]HERMANN KULKE, DIETMAR ROTHERMUND ,A History of India [৩]A L BASHAM ,A Cultural History of India বাকিটুকু পড়ুন...

খাম

অনেকদিন পর রাতে পুরনো ডায়েরিটা পড়ছিলাম।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ডায়েরী।বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ডায়েরী লেখাকে একটা অভ্যাসে পরিনত করেছিলাম।স্বাভাবিকভাবেই নানান নষ্টালজিক ঘটনায় ঠাসা ডায়েরীটা।সেগুলোই এতদিন পর পড়ছিলাম।ডায়েরীর ভিতর একটা খাম পেলাম।সাদা,ছোট্র একটা খাম।খামের গায়ে আকাশী বর্ণের দু-তিনটি মিকিমাউস টাইপের কার্টুন আঁকা।আমি খামটি দেখতে থাকি,পরম মমতাভরে হাত বুলোতে থাকি খামের উপর।কেন জানি চোখ ভিজে আসতে থাকে আমার।মাথা নিছু করে ছিলাম।কয়েক ফোঁটা পানি গিয়ে পড়ে আমার চশমাটার উপর।ঝাপসা হয়ে ওঠে চশমাটা।আম্মা রুমে ঢুকে আমাকে ডাকেন কিরে কি হেয়েছে চোখে পানি কেন।আমি চেয়ারে ঝুলানো গামছাটা দিয়ে চোখ আর চশমাটা মুছি।না মাথাটা ব্যথা করছিল তো তাই একটু নিক্স লাগালাম মাথায়,চোখেও গেছে বোধহয় একটু।মিথ্যা কথাটা আমাকে বলতেই হয়।সাবধানে দিবিনা ,আমাকে বললেই হত লাগিয়ে দিতাম।মাথা ব্যথা করছে তো বসে আছিস কেন?আমি লাইট বন্ধ করে দিচ্ছি শুয়ে পড়।একনাগাড়ে কথাগুলো বলে আম্মা লাইট নিভিয়ে চলে যান।আমি শুয়ে পড়ি।আমার চোখে মনাদের বাড়িটা ভেসে ওঠে। বেশ বড়ই বাড়িটা।ঢাকা শহরে এরকম বড় বাড়ি খুব একটা চোখে পড়ে না।মেইন গেট পেরিয়ে বড় একটা বাগান পড়ে ।বাগানের মধ্যে প্রসস্থ রাস্তাটা দিয়ে কিছুক্ষন হাটলে তবেই মূল দালানের গেটটা পাওয়া যায়।আমি মনাকে ওদের অদ্ভুদ ডিজাইনের বড় বাড়িটা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিলাম।ও বলেছিলো ওদের দাদার বানানো বাড়ি।ঐতিহ্যের খাতিরে নাকি ভাঙা হয়নি।মনাদের শ্রেনীর লোকেরা ঐতিহ্য খুব পছন্দ করে তাই আমি আর বিশেষ কিছু বলিনি।মনাদের বাড়ীতে আমাকে কয়েকদিন যেতে হয়েছিলো। মনাকে আমি পড়াতাম ,খুব বেশীদিন না অল্পদিন।বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মফস্বলের স্কুল শিক্ষক বাবার কাছে কয়েকমাস টাকা নেওয়ার পর মনে হচ্ছিল না অনেক হয়েছে আর না এবার নিজেই কিছু করি।এক বন্ধুর মারফত গেলাম ওকে পড়াতে ঠিক ওর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার বারোদিন আগে।ফাইনাল রিভিশনের জন্য যাওয়া আরকি।প্রথমদিন মনাদের বাড়ীতে ঢুকতে একটু ভয় হয় আমার।বড়লোকদের বাড়ী,আগে কখনো এরকম বাড়িতে ঢোকা হয়নি। বিশেষত 'কুকুর হইতে সাবধান 'জাতীয় কথাবার্তা আমার জানা ছিল এবং তৎসংক্রান্ত দু একটি ঘটনাও কোথাও কোথাও পড়েছিলাম।তাই বড়লোক সংক্রান্ত আমার একটা ভয় ছিল।কিন্তু বাস্তবে সেরকম কিছু হয়নি।গেটে একজন দাড়োয়ান দাড়ানো ছিল সে আমাকে আমার নাম আর আসার কারন বলামাত্র দরজা খুলে বাগানের রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়েছিল।হয়ত আগেই বলা ছিল।আমি মনাদের বাড়িটা দেখে অবাক হয়েছিলাম,অবাক হয়েছিলাম ওদের গাড়িগুলো দেখেও।একটা পরিবারের এতগুলো গাড়ীর কি দরকার হতে পারে কিছুতেই মাথায় ঢোকেনি আমার। মনাকে পড়ানোমাত্র আমি আবিষ্কার করলাম সে দুনিয়াসম্পর্কিত অনেক সাধারণ জিনিস দেখেনি,বোঝেও না অনেককিছু।মনা কখনো খেজুর রস খায়নি ,চড়েনি নৌকায়ও।কুমড়ার ফুল দিয়ে যে বড়া বানানো যায় তা সে জানতনা।আমি বলার পর সে এমনভাবে আমার দিকে তাকিয়েছিল যেন আমি একটা কুখাদ্যর রেসিপি দিচ্ছি ওকে।আমি খুবই আশ্চর্য হয়ে জানতে পারি পাটগাছ ও ভুট্রাগাছ নামের যে দুটি অতি পরিচিত গাছ আছে তা মনা কখনো দেখেনি।সে মনে করেছিল ভুট্রাগাছ লিচু গাছের মত বড় কোন গাছ হবে।আমি মেয়েটার কথাবার্তা শুনে হাসি,অবাকও হই।মনার সরলতা আমার ভালই লাগে।নানান বিষয়ে কথা বলতে বলতে সময় গড়িয়ে যায়,পড়ানো হয়ে ওঠে সামান্যই।আমার আর মনার গল্প শেষ হয়না। মেয়েদের সাথে আমি আগে এরকমভাবে কখনও মিশিনি।বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ওঠার আগে যখন বাড়িতে থাকতাম তখন বলা যায় একরকম এড়িয়েই চলতাম মেয়েদের।মেয়েদের সাথে কথা বলতে কেন জানি রাজ্যের লজ্জা ভর করত আমার ওপর।আম্মা ব্যাপারটা জানতেন তাই হল থেকে যখন ছুটিছাটায় বাড়িতে যেতাম তখন জিজ্ঞাসা করতেন কি রে কোন বান্ধবি -টান্ধবি হল।আমি আম্মার কথাটার মানে বুঝতাম আর একটু মুচকি হেসে বলতাম না,হল না। তাই মনার সাথে অনবরত কথা বলার সময় মনার মাঝে মেয়েদের নতুন করে আবিষ্কার করতে থাকি আমি।কথা বলার সময় মনা অকারনে খিলখিল করে হেসে ওঠে।কোন ছেলেবন্ধু হলে আমি নিশ্চিত বিরক্ত হতাম কিন্তু মনার এরকম অসংযত,অকারন হাসি আমার ভালো লাগে,এক ধরনের ভাললাগা তৈরী হতে থাকে মনার জন্য ,আগে যা কখনও হয়নি কোনো মেয়ের জন্য।আমি বুঝতে পারি আমি দুর্বল হয়ে পড়ছি,কিন্তু এ দুর্বলতা আমি ঠেকাতে পারিনা।আমার খারাপ লাগতে থাকে।আমার অবস্থাগত কারনে দুর্বল হওয়ায় আমার খারাপ লাগতে থাকে,খারাপ লাগতে থাকে ছাত্রীর প্রতি দুর্বল হওয়াতেও।আমি নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকি। বারোদিন পড়ানো হয়ে গেলে মনা আমাকে সাদা খামটি দেয়।বলে ভাইয়া আম্মু দিয়েছে।এর আগে আমি কখনো পড়ানো বাবদ খামভর্তি টাকা নেইনি।একটু বিব্রতবোধ হয় আমার।চট করে খামটি সামনের পকেটে রাখি।মনাকে আর পড়ানো হবেনা,হয়ত দেখাও হবেনা কখনও ভাবনাটা মাথায় চেপে থাকে ।মনটা ভারী হয়ে ওঠে আমার।যন্ত্রের মত পড়াই আমি,কোন গল্প হয়ে ওঠেনা সেদিন।পড়ানো হয়ে গেলে আমি বলি মনা আজকে তাহলে যাই,ভালোভাবে পরীক্ষা দিও।মনা বলে, আচ্ছা।আমি মনার কিছু বলার জন্য বৃথা অপেক্ষা করতে থাকি।মনা কিছু বলেনা,চুপ করে থাকে,ফোন আসে ফোন ধরে কথা বলতে থাকে।আমি বসেই থাকি,কেন জানি যেতে ইচ্ছে করেনা।মনা ফোন কেটে দিয়ে আমার দিকে তাকায়,আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি। আমি বসে আছি কেন মনার তো কিছু বলার কথা নয়,কেউ একজন ভিতে থেকে আমাকে নাড়া দেয়।আমাকে উঠতেই হয়।আমি বলি ঠিক আছে গেলাম।দরজার দিকে পা বাড়াই আমি,মনাও দেখি দরজা পর্যন্ত আসে।আমার বুকের ভিতরটায় ধক করে ওঠে,আমি দরজায় গিয়ে দাড়াই।মনা কি কিছু বলবে,আশান্বিত আমি চেয়ে দেখি মনার দিকে।মনা বলে ভাইয়া দোয়া করবেন,চান্স পেলে খাওয়াব।আমি বলি হ্যাঁ দোয়াতো করবই।দরজার সামনের লনটাতে পা বাড়াই আমি। মনাদের বাড়ী থেকে এই একটি খাম নিয়ে আমি ফিরে আসি।মনার সাথে আমার আর কখনও দেখা হয়নি।এই পৃথিবীতে কেইবা কাউকে মনে রাখে!মাঝে মাঝে আমি খামটা বের করে দেখতাম।মনার কথা চিন্তা করতাম,কেমন আছে বোকা মেয়েটা! আমি হয়ত তখনও বুঝিনি মনার কাছ থেকে এই একটিমাত্র খামের বেশী আর কিছু পাওয়ার যোগ্যতা আমার ছিলনা। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/14468 বাকিটুকু পড়ুন...

চোর

মফস্বল শহরে বাসা পাল্টানো খুবই ঝামেলার কাজ।ওখানে ঢাকার মত প্যাক এন্ড মুভ জাতীয় সংস্থা থাকেনা।তবু কাজটা প্রায়ই করতে হয়।বাবা সরকারী চাকুরী করেন,বদলীর চাকুরি।গড়ে তিন বছরে একবার বদলী।আমরা দেশের বাড়ী থেকে দু-চারজন লোকজন আনি জিনিসপত্র আনা নেওয়া করার জন্য।একবার বদলীর পর নতুন বাসায় আমার ছোট্ট ওয়াকম্যানটা খুঁজে পাইনা।আম্মাকে বলি ।আম্মা দোষ দেন দেশ থেকে আসা লোকগুলোর।"বুঝিস না চোর-ছ্যাচ্চর এর জাত ,যা চোখে পড়ে তাই নিয়ে যায়।আমিওতো দরজার একটা সাদা পর্দা পাচ্ছিনা।" কাজের মেয়েটা বলে "ভাইজান এরা চুর,আমরার চেনটা নিছে,বিচরাইতেছি,পাইত্যাছি না,"।আব্বা অফিস থেকে ফিরলে আম্মা বিচার দেন কি লোক নিয়া আসছ,বাসার নানান জিনিস সরাইছে।আব্বা বলেন দেশের বাড়ী থেকেই তো লোক নিয়া আসলাম,এরা চুরি করলে কি করবা।আম্মা গজরাতে থাকেন।আমি ভাবি শালা চোরের দেশ,সব শালা চোর।চোরের চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করে রাতে ঘুমাতে যাই। পরদিন সকালে নতুন কেনা আলমিরাটা খুলতে গিয়ে ওয়াকম্যান আর দরজার সাদা পর্দাটা পাওয়া যায়। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/14302 বাকিটুকু পড়ুন...

মোফাকখারুল পর্ব -০১

সপ্তাহে পাঁচদিন সকাল আটটার সময় আমার মেজাজ খারাপ থাকে।কারন ঐ পাঁচদিন আটটায় ক্লাস থাকে।রাত চারটা-পাঁচটা পর্যন্ত জেগে থেকে কেইবা আটটায় ক্লাস নামক জিনিসটা করতে যায়।তারপরেও যাই,ভাগ্যের ফেরে যেতে হয়।পিছনের বেন্চে বসে বই সামনে নিয়ে পড়ার ভান ধরে ঝিমুতে থাকি।সেদিনও সকালে ঝিমুচ্ছিলাম,মনুষ্যকন্ঠে আমার নাম শুনে তন্দ্রাবিলোপ ঘটে।"এই কায়েস ঘুমাচ্ছিল"।আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।কোন শালা আবার সাতসকালে ডাকাডাকি করে।আমি চোঁখ মেলে চাই,মোফাকখারুল ডাকছে।আমি মোফাকখারুলকে দেখে অবাক হই।এই ফাষ্ট বেন্চার এখানে কি করছে।মোফাকখারুল করুনামাখা কন্ঠে বলে কায়েস আমিতো শেষ।আমি মোফাকখারুলের শেষ হওয়ার কোন কারন খুঁজে পাইনা।যুগপৎভদ্র এবং বলদ(!) ছেলে মোফাকখারুল।সকালে বাপের গাড়ীতে চেপে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে আসে,প্রথম বেন্চে বসে আটটা থেকে একটা পর্যন্ত মাছিমাড়া কেরানীর মত স্যারদের লেকচার তোলে,ল্যাব থাকলে আড়াইটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে ল্যাব করে,মাঝের এক-দেড় ঘন্টা বাসা থেকে আনা কাটলেট আর সেন্ডুইচ খেয়ে লাইব্রেরীতে পড়াশুনা করে আর ক্লাসটেষ্টে অনবরত বিশে বিশ পেতে থাকে।ক্লাসের সুন্দরী মেয়েরা মোফাকখারুলের সাথে ন্যাকামি করে,একটু পড়াটা বুঝাওনা মোফাকখারুল।আমার মেজাজটা খারাপ হয়।শালা মর তুই!কিন্তু আমি জানি এ একটা আধা না পুরা বলদ,দুনিয়াদারী সম্বন্ধে এর কোন আইডিয়া নাই।কোথা থেকে একদিন শুনে এসেছে নীল ছবি নামে একধরনের ছবি আছে তারপর দু-তিনদিন আমাকে জ্বালিয়েছে নীল ছবি কি,নীল ছবি কি বলে।আমি বলিনি ,বলেছি আছে না কত ধরনের ছবি আছে দুনিয়ায়,এটা মনে হয় কোন বিশেষ দেশের তৈরি ছবি।বেটা বিশ্বাস করেছে,বলদ না!বিশ্বাস তো করবেই।তো মোফাকখারুলের সমস্যার কথা শুনে আমারও কিছুটা কৌতুহলের উদ্রেক হয়।আমি বলি ক্যান কি হইছে।সে আবার বলে কায়েস আমি তো শেষ,মানুষে আমাকে খারাপ ভাবছে।আমি বলি আরে খুলে বল তো কি হইছে।সে বলে নীলা নাকি তাকে বলেছে সে নাকি খুব অশ্লীল।তার সাথে আর কথা বলবে না। -ক্যানো তুমি তাকে কি বলছ -আরে আমি বলেছি তুমি কি পেন্টিটা পড়ছ আমি ভাবি কাম সারছে আজ।আমি জানতে চাই আর কি সে বলছে। - আর কি বলব।এই কথা বলার পরেই তো সে মুখ লাল করে ফেলল।আমি বললাম আমি গতকাল পেন্টি পড়েছি।খুব ভালো লাগছে পেন্টিটা পড়ে।অনেক জিনিসই তো পড়লাম,কিন্তু এটার মত ভাল লাগলো না কিছু।আমি বললাম পেন্টির কথা বলা তোমার ঠিক হয়নি।ও আকাশ থেকে পড়ে।বলে -আরে কত কিছুই তো আমরা সংক্ষেপে বলি।ডাটা কমুনিকেশন কোর্সটাকে গতবার ডাটাকম বললামনা,প্যাটার্ন রিকগনিকেশনকেও তো পিআর বলি।আমি বলি হ্যাঁ ঠিক আছে,কিন্তু,,,,।ও আমার কথা শেষ করতে দেয়না। -ডাটা কমুনিকেশনকে ডাটাকম,প্যাটার্ন রিকগনিকেশনকে পিআর বললে সমস্যা যদি না থাকে তাহলে মাইক্রোপ্রসেসর কোর্সের ইন্টেলের পেন্টিয়াম মাইক্রোপ্রসেসরকে পেন্টি বলতে সমস্যা কোথায়।স্যারই তো একদিন বলেছিল। আমি বিষম খাই।মাছি মারা কেরানী ছাত্র হওয়ার বিপদ বুঝতে পারি।মোফাকখারুলকে আসল কথা বলিনা।শালা মেয়েদের সাথে দহরম-মহরম,নে এবার বোঝ ঠেলা।এবার যদি মেয়েদের ন্যাকামিটা কমে।আমি মিটিমিটি হেসে আবার ঝিমুতে থাকি। বাকিটুকু পড়ুন...

তুমি বিষয়ক

১।ফুটন্ত কলি স্পন্দিত হচ্ছে নির্বিঘ্নে লাভ কার গোলাপ গাছ তোমার না ভ্রমরার চাক ভেঙে মৌ মৌ করে উঠছে মধু লাভ হচ্ছে কার জারুল গাছ তোমার না মৌমাছির। তুমি দুলে উঠছ অক্লেশে সর্বাঙ্গ শরীর থেকে মুছে ফেলছো অন্ধকার চিবুক ,স্তনে অবিরাম চাষ হচ্ছে গোলাপ বসরার সুগন্ধি লাল গোলাপ বলে দেবে একবার লাভ হবে কার আমার না তোমার বর্বর স্বামীর। ২।তুমিই তো কেড়ে নিয়েছিলে সব মধু ,পড়তে পড়তে শরীরে ছড়ানো দেখ তাই মৌমাছিরা বড় অসহায় মধু ভেবে মানব রাবারে হুল ফোটায়। বাকিটুকু পড়ুন...

আমি বাংলাদেশ এখনও মরিনি - বেঁচে আছি

আমি বাংলাদেশ আমাকে যারা তোমরা খুঁচিয়েছ,রক্তাক্ত করেছ চোঁখ মেলে চেয়ে দেখ তারা আজ এখনও আমি মরিনি ছাপান্ন হাজার বর্গমাইল অধিকার করে এখনো বেচেঁ আছি পলিসন্চন করে বাড়িয়ে তুলছি আমার অস্তিত্ব। আমার বুক চিরে বয়ে যাওয়া নদীগুলো একদা যাদের অস্তিস্তের সাথে মিশে থাকত নৌকা ও ইলিশ এখন তাদের অধিকারে বিস্তীর্ণ বালুচর,কিম্ভুদরুপী বাঁধ জেলেপাড়ার হারান মাঝি মাছ দেখেনা চোঁখে বৃদ্ধ হারানের চোখে নদীগুলোর জন্য হাহাকার মরে যাওয়া এসব প্রতিটি নদী মৃত্যুর আগে বলে যাচ্ছে তোমরা হত্যাকারী আমার নদীগুলোকে তোমরা হত্যা করছ আমি বাংলাদেশ,আমাকে তোমরা হত্যা করছ। মিলের গুদামে সারি সারি গাছের গুড়িগুলো আসবাব ভেবে যাদের করেছ গুদামজাত এদের বলতে দাও এরা বলবে তোমরা হত্যাকারী যুগ-যুগান্তরের আমার বৃক্ষেরা আমার বুকে মাথা উচু করে দাড়ানো বৃক্ষেরা এদেরকে তোমরা হত্যা করছ আমি বাংলাদেশ,আমাকে তোমরা হত্যা করছ। বায়ুতে আমার ভরছ বিষাক্ত সীসা প্রবলভাবে শব্দাধিক্যর চর্চা করছ ডেসিবেলে কর্ষিত জমির মধ্যে ভরে দিচ্ছ অ্যামোনিয়াম সালফেট যেন ধমনীর মধ্যে বয়ে বেড়াচ্ছি পটাশিয়াম সায়ানেড তবুও আমি বেচেঁ আছিএখনও না মরে বেচেঁ আছি। আমি বাংলাদেশ বেঁচে থাকব রক্তাক্ত,বিক্ষত আমি বেঁচে থাকব আমার প্রতিটি শব্দ বেঁচে থাকবে যতদিন আমার প্রতিটি বর্ণ বেঁচে থাকবে যতদিন আটষট্টি হাজার সবুজ গ্রাম নিয়ে মুখ থুবরে পড়ে থাকব ততদিন। বাকিটুকু পড়ুন...

মানিব্যাগ,আমার মানিব্যাগ

একটি মানিব্যাগের স্বপ্ন আমার ছোটবেলা থেকেই।বাবা-চাচাকে মানিব্যাগ পকেটে করে সগর্বে হাটতে দেখে আমারও একটি মানিব্যাগের গর্বিত মালিক হওয়ার ইচ্ছে জাগে।চাচাকে দেখতাম মানিব্যাগের মধ্যে দুনিয়ার যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে ঘুরতেন।জানতে চাইলে বলতেন বড় হ বুঝবি।হ্যাঁ বড় হওয়ার আগে যে মানিব্যাগ কেনার টাকা পওয়া যাবে না তা আমি জানতাম।তাই প্রথমদিকে মানিব্যাগ দেখেই দর্শনতৃপ্তি লাভ করতে হত,কিন্তু আত্বতৃপ্তি পেতাম না।না।বাসায় আত্বীয়স্বজন বেড়তে আসলে আমি প্রাথমিক আলোচনার পরেই তাদের মানিব্যাগ দেখতে চাইতাম।তাদের অধিকাংশই বিরক্ত হত,মুখে বলত না কিছু কিন্তু বাসায় ঝাড়িটা খেতাম ঠিকই। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় প্রবলভাবে মানিব্যাগপ্রাপ্তির আশা চেপে বসল আমার মনে। পণ করলাম যে করেই হোক এ জিনিস আমাকে একটা অধিকার করতেই হবে।কিন্তু চাইলেই তো সব হয়না তার জন্য দরকার উপযুক্ত কার্যকরন।চেষ্টার কমতি ছিল না আমার।একটি মানিব্যাগের জন্য আমি নানানভাবে টাকাপয়সা নয়-ছয় শুরু করতে লাগলাম।আম্মা অফিস থেকে ফিরলেই অপেক্ষা করতাম কখন রান্নাঘরে যাবেন আর আমি আলগোছে আলমারীতে রাখা ওনার অফিসব্যাগ থেকে এক-দুইটা একটাকার পয়সা সরিয়ে ফেলব না।আব্বার জন্য অপেক্ষা করতাম দুপুরে,কখন দুপুরের ভাত খেয়ে আব্বা ঘুমাবেন আর আমি হ্যাংগারে রাখা শার্ট থেকে দু-একটা টাকা সরাব।এভাবে নানান কাটখড় পুড়িয়ে চল্লিশ টাকার বিনিময়ে এক হাটের দিনে মফস্বলের বাজার থেকে একটি মানিব্যাগ কিনলাম,গর্বিত মালিক হলাম একটি মানিব্যাগের।ছোট চাচার মত অজস্র কাগজ ভরিয়ে পেট মোটা করে ফেললাম মানিব্যাগের।স্কুলে গিয়ে পকেটে মানিব্যাগ নিয়ে বুক ফুলিয়ে হাটি,কারনে-অকারনে অন্যদের সামনে বের করে উল্টেপাল্টে দেখি।বন্ধুদের বলি দেখ,মানিব্যাগ দেখ,আমার,তোর আছে এরকম।বন্ধুরা ঈর্ষায় জ্বলে,ওরাও মানিব্যাগের স্বপ্ন দেখা শুরু করে। কিন্তু সুখের দিন আমার বেশিদিন স্থায়ী হয়না।এক ছুটির দিনে দুপুরে কাপড় কাচতে গিয়ে আম্মা দেখে ফেলেন আমার গোপন সম্পত্তি।কখন,কোথায়,কিভাবে পেয়েছি তা নিয়ে জেরা চলতে থাকে।বলাতো যায়না চুরি করা টাকা দিয়ে মানিব্যাগ কিনেছি তাই নানান সময়ে নানান কথা বলতে হয়।ধোপে টেকেনা আমার যুক্তি।সীজ হয়ে যায় আমার সাধের মানিব্যাগ।কিন্তু তবুও আমার একটি মানিব্যাগের স্বপ্ন শেষ হয়না। বৈধভাবে আমার প্রথম মানিব্যাগ কেনা হয় এস,এস,সি পাশ করে মফস্বল থেকে জেলা শহরে কলেজে ভর্তি হওয়ার সময়।এবার আর কাউকে বলতে হয়না,বাসা থেকেই টাকা দিয়ে দেয় মানিব্যাগ কেনার জন্য।পয়ষট্রি টাকা দিয়ে কালো রঙের মানিব্যাগ কিনি একটি।ছোটখাট একটা ভল্ট হিসেবে ব্যবহার শুরু করি একে।বাসা থেকে পাঠানো আম্মার চিঠি,সময়ে অসময়ে লেখা ছড়া-কবিতা,নানান ধরনের দলিল-দস্তাবেজ ভরে ফেলি এতে।ধীরে ধীরে আমার ব্যক্তিগত এনসাইক্লোপেডিয়া হয়ে ওঠেমানিব্যাগটি।ধীরে ধীরে আমার অস্তিস্তের সাথে মিশে যেতে থাকে মানিব্যাগটি।আমাকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হয় এর অস্তিস্ত রক্ষায়।মানিব্যাগ রাখার জন্য নতুন বানানো প্যান্টগুলোতে দর্জির কাছে গিয়ে পিছনের পকেটের উপরে বোতামসহ ঢাকনা বানিয়ে আনি ,মেসে ঘুমানোর সময় বালিশের নিচে রাখি,বাসে বা ভীড়ের মধ্যে চলাচলের সময় মাঝে মাঝে হাত রাখি পকেটে,বুঝতে চেষ্টা করি ঠিক আছে তো সব।এভাবে মানিব্যাগটির সাথে আত্বীয়তা করে সময় গড়িয়ে যায় আমার। কিন্তু শেষরক্ষা শেষ পর্যন্ত হয়না।এইচ,এস,সি পাশের পর ঢাকায় এসে মানিব্যাগটি বেহাত হয়ে যায়।মফস্বল থেকে সদ্য পাশ করা বোকা এই আমি জানতাম না এই শহরে দিনদুপুরে লোকজন অন্যের জিনিসপত্রে চোঁখ দেয়,ছিনিয়ে নেয় জোর করে।একান্ত বন্ধুর মত সবসময় সাথে থাকা মানিব্যাগটি হারিয়ে আমি যেন র্নিবান্ধব হয়ে পড়ি, মানিব্যাগটিতে থাকা জিনিসপত্রগুলোর জন্য হয়ে পড়ি কাতর।সর্বোপরি মানিব্যাগটির শোকে কাতর আমাকে আরো কয়েকমাস মানিব্যাগবিহীন থাকতে হয়। বু্য়েটে ভর্তি হই।স্বাভাবিকভাবে জীবন চলতে থাকে,একটু ভালোভাবে থাকার জন্য টিউশনি ধরি।মাসশেষে অনেকগুলো টাকা ওঠে হাতে।বন্ধু-বান্ধব অনেকে বলে পুরানো মোবাইল ব্যবহার করিস একটা নতুন মডেলের মোবাইল নে।আমি মোবাইল কেনার জন্য মার্কেটে যাই কিন্তু ফিরে আসি মেন্জ ক্লাব থেকে পনেরস টাকা দিয়ে মানিব্যাগ কিনে। বন্ধুরা যারা আমার মানিব্যাগের ঘটনাবলী জানে তারা হাসে,বলে আবার মানিব্যাগ। অনেকে বলে শুধু টাকা রাখার জন্য এত টাকার মানিব্যাগ,অপচয়,পুরোটাই অপচয়।ওরাতো জানে না মানিব্যাগ শুধু আমার কাছে একটি অর্থথলি নয়,এটা আমার ভল্ট,আমার বন্ধু।আবার আমার মানিব্যাগের মোটা হতে শুরু করে।স্থান পেতে শুরু করে প্রমিকার পত্র থেকে শুরু করে সদ্য কেনা ঘড়ির দোকেনের ম্যামো পর্যন্ত ।কিন্তু এবারও শেষরক্ষা হয়না।এক ফাল্গুনের দুপুরে ল্যাব থেকে ফিরে এসে যখন প্রবলভাবে ঘুমাই তখন হলে আমার রুম থেকে চুরি হয়ে যায় মানিব্যাগটি।এবার আমাকে অনেক যন্ত্রনা পোহাতে হয়।হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড হারানোতে থানায় জিডি করতে হয়,ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড হারানোতে পাঁচশত টাকা দিয়ে নতুন করে তুলতে হয় ক্রেডিট কার্ড ।আমার আফসোস বাড়ে ইস! আরএকটু যত্ন করে যদি রাখতাম মানিব্যাগটি।আফসোস করতে করতে আমি আবারো একটি নতুন মানিব্যাগ কেনার স্বপ্ন দেখি। একটি মানিব্যাগের স্বপ্ন আমার ছোটবেলা থেকেই।বাবা-চাচাকে মানিব্যাগ পকেটে করে সগর্বে হাটতে দেখে আমারও একটি মানিব্যাগের গর্বিত মালিক হওয়ার ইচ্ছে জাগে।চাচাকে দেখতাম মানিব্যাগের মধ্যে দুনিয়ার যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে ঘুরতেন।জানতে চাইলে বলতেন বড় হ বুঝবি।হ্যাঁ ,বড় হওয়ার আগে যে মানিব্যাগ কেনার টাকা পাওয়া যাবে না তা আমি জানতাম।তাই প্রথমদিকে মানিব্যাগ দেখেই দর্শনতৃপ্তি লাভ করতে হত,কিন্তু আত্বতৃপ্তি পেতাম না।বাসায় আত্বীয়স্বজন বেড়াতে আসলে আমি প্রাথমিক আলোচনার পরেই তাদের মানিব্যাগ দেখতে চাইতাম।তাদের অধিকাংশই বিরক্ত হত,মুখে বলত না কিছু কিন্তু বাসায় ঝাড়িটা খেতাম ঠিকই। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় প্রবলভাবে মানিব্যাগপ্রাপ্তির আশা চেপে বসল আমার মনে। পণ করলাম যে করেই হোক এ জিনিস আমাকে একটা অধিকার করতেই হবে।কিন্তু চাইলেই তো সব হয়না তার জন্য দরকার উপযুক্ত কার্যকরন।চেষ্টার কমতি ছিল না আমার।একটি মানিব্যাগের জন্য আমি নানানভাবে টাকাপয়সা নয়-ছয় করতে শুরু লাগলাম।আম্মা অফিস থেকে ফিরলেই অপেক্ষা করতাম কখন রান্নাঘরে যাবেন আর আমি আলগোছে আলমারীতে রাখা ওনার অফিসব্যাগ থেকে এক-দুইটা একটাকার পয়সা সরিয়ে ফেলব।টাকাপয়সা আরো থাকত কিন্তু ধরা পড়ার ভয়ে হাত বাড়াতাম না। আব্বার জন্য অপেক্ষা করতাম দুপুরে,কখন দুপুরের ভাত খেয়ে আব্বা ঘুমাবেন আর আমি হ্যাংগারে রাখা শার্ট থেকে দু-একটা টাকা সরাব।এভাবে নানান কাটখড় পুড়িয়ে চল্লিশ টাকার বিনিময়ে এক হাটের দিনে মফস্বলের বাজার থেকে একটি মানিব্যাগ কিনলাম,গর্বিত মালিক হলাম একটি মানিব্যাগের।ছোট চাচার মত অজস্র কাগজ ভরিয়ে পেট মোটা করে ফেললাম মানিব্যাগের।স্কুলে গিয়ে পকেটে মানিব্যাগ নিয়ে বুক ফুলিয়ে হাটি,কারনে-অকারনে অন্যদের সামনে বের করে উল্টেপাল্টে দেখি।বন্ধুদের বলি দেখ,মানিব্যাগ দেখ,আমার,তোর আছে এরকম।বন্ধুরা ঈর্ষায় জ্বলে,ওরাও মানিব্যাগের স্বপ্ন দেখা শুরু করে। কিন্তু সুখের দিন আমার বেশিদিন স্থায়ী হয়না।এক ছুটির দিনে দুপুরে কাপড় কাচতে গিয়ে আম্মা দেখে ফেলেন আমার গোপন সম্পত্তি।কখন,কোথায়,কিভাবে পেয়েছি তা নিয়ে জেরা চলতে থাকে।বলাতো যায়না যে চুরি করা টাকা দিয়ে মানিব্যাগ কিনেছি তাই নানান সময়ে নানান কথা বলতে হয়।ধোপে টেকেনা আমার যুক্তি।সীজ হয়ে যায় আমার সাধের মানিব্যাগ।কিন্তু তবুও আমার একটি মানিব্যাগের স্বপ্ন শেষ হয়না। বৈধভাবে আমার প্রথম মানিব্যাগ কেনা হয় এস,এস,সি পাশ করে মফস্বল থেকে জেলা শহরে কলেজে ভর্তি হওয়ার সময়।এবার আর কাউকে বলতে হয়না,বাসা থেকেই টাকা দিয়ে দেয় মানিব্যাগ কেনার জন্য।পয়ষট্রি টাকা দিয়ে কালো রঙের মানিব্যাগ কিনি একটি।ছোটখাট একটা ভল্ট হিসেবে ব্যবহার শুরু করি একে।বাসা থেকে পাঠানো আম্মার চিঠি,সময়ে অসময়ে লেখা ছড়া-কবিতা,নানান ধরনের দলিল-দস্তাবেজ ভরে ফেলি এতে।ধীরে ধীরে আমার ব্যক্তিগত এনসাইক্লোপেডিয়া হয়ে ওঠেমানিব্যাগটি।আমার অস্তিস্তের সাথে মিশে যেতে থাকে মানিব্যাগটি।আমাকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হয় এর অস্তিস্ত রক্ষায়।মানিব্যাগ রাখার জন্য নতুন বানানো প্যান্টগুলোতে দর্জির কাছে গিয়ে পিছনের পকেটের উপরে বোতামসহ ঢাকনা বানিয়ে আনি ,মেসে ঘুমানোর সময় বালিশের নিচে রাখি,বাসে বা ভীড়ের মধ্যে চলাচলের সময় মাঝে মাঝে হাত রাখি পকেটে,বুঝতে চেষ্টা করি ঠিক আছে তো সব।এভাবে মানিব্যাগটির সাথে আত্বীয়তা করে সময় গড়িয়ে যায় আমার। কিন্তু শেষরক্ষা শেষ পর্যন্ত হয়না।এইচ,এস,সি পাশের পর ঢাকায় এসে মানিব্যাগটি বেহাত হয়ে যায়।মফস্বল থেকে সদ্য পাশ করা বোকা এই আমি জানতাম না এই শহরে দিনদুপুরে লোকজন অন্যের জিনিসপত্রে চোঁখ দেয়,ছিনিয়ে নেয় জোর করে।একান্ত বন্ধুর মত সবসময় সাথে থাকা মানিব্যাগটি হারিয়ে আমি যেন র্নিবান্ধব হয়ে পড়ি, মানিব্যাগটিতে থাকা জিনিসপত্রগুলোর জন্য হয়ে পড়ি কাতর।সর্বোপরি মানিব্যাগটির শোকে কাতর আমাকে আরো কয়েকমাস মানিব্যাগবিহীন থাকতে হয়। বু্য়েটে ভর্তি হই।স্বাভাবিকভাবে জীবন চলতে থাকে,একটু ভালোভাবে থাকার জন্য টিউশনি ধরি।মাসশেষে অনেকগুলো টাকা ওঠে হাতে।বন্ধু-বান্ধব অনেকে বলে পুরানো মোবাইল ব্যবহার করিস একটা নতুন মডেলের মোবাইল নে।আমি মোবাইল কেনার জন্য মার্কেটে যাই কিন্তু ফিরে আসি মেন্জ ক্লাব থেকে পনেরস টাকা দিয়ে মানিব্যাগ কিনে। বন্ধুরা যারা আমার মানিব্যাগের ঘটনাবলী জানে তারা হাসে,বলে আবার মানিব্যাগ। অনেকে বলে শুধু টাকা রাখার জন্য এত টাকার মানিব্যাগ,অপচয়,পুরোটাই অপচয়।ওরাতো জানে না মানিব্যাগ শুধু আমার কাছে একটি অর্থথলি নয়,এটা আমার ভল্ট,আমার বন্ধু।আবার আমার মানিব্যাগ মোটা হতে শুরু করে।স্থান পেতে থাকে প্রেমিকার পত্র থেকে শুরু করে সদ্য কেনা ঘড়ির দোকানের ম্যামো পর্যন্ত ।কিন্তু এবারও শেষরক্ষা হয়না।এক ফাল্গুনের দুপুরে ল্যাব থেকে ফিরে এসে যখন প্রবলভাবে ঘুমাই তখন হলে আমার রুম থেকে তিনশ টাকাসমেত চুরি হয়ে যায় মানিব্যাগটি। আমাকে অনেক যন্ত্রনা পোহাতে হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড হারানোতে থানায় জিডি করতে হয়,ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড হারানোতে পাঁচশত টাকা দিয়ে নতুন করে তুলতে হয় ক্রেডিট কার্ড ।আমার আফসোস বাড়ে ইস! আরএকটু যত্ন করে যদি রাখতাম মানিব্যাগটি,ইস! ঐ সময়ে যদি অমন কুম্ভকর্নের মত না ঘুমাতাম।আফসোস করতে করতে আমি আবারো একটি নতুন মানিব্যাগ কেনার স্বপ্ন দেখি। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/13964 বাকিটুকু পড়ুন...

সময় পরিভ্রমণ কি আসলেই সম্ভব?

সময় পরিভ্রমণ কি সম্ভব? সায়েন্স ফিকশনগুলোতে সময় পরিভ্রমণ করে অতীত বা ভবিষৎতে যাওয়া-আসা দেখানো হয়। সুতরাং খুব বাড়াবাড়ি রকম সায়েন্স ফিকশনের ভক্ত ছাড়া সবাই বলবে যে, না, সময় পরিভ্রমণ সম্ভব নয়। তবে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান কিন্তু একধরণের সময় পরিভ্রমণের কথা স্বীকার করে। আইনস্টাইনের থিওরী অব রিলেটিভিটি থেকে আমরা জানি, কোন নভোচারী যদি দূরবর্তী কোন গ্রহ বা নক্ষত্রে আলোর কাছাকাছি কোন বেগে ভ্রমণ করে তাহলে সে একশো বছরের ভবিষ্যতেও যেতে পারবে। কারণ এই প্রক্রিয়ায় তার মাত্র কয়েক বছর ব্যয় হবে। সুতরাং না হয় ধরেই নেয়া হলো যে, ভবিষ্যৎ সময়ে এভাবে পাড়ি দেয়া সম্ভব, কিন্তু অতীতে? বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলোতে এ ধরণের ঘটনা দেখানো হয়, যা আপাতত দৃষ্টিতে অসম্ভব। ধরুন, আপনার জন্ম ১৯৬০ সালে। এখন যদি আপনি সময় পরিভ্রমণ করে ১৯০০ সালে যেতে চান সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত হবে? কারণ, সেই সময় তো আপনি জন্মগ্রহণই করেননি। তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নেয়া হয় যে, আপনি সময় পরিভ্রমণ করে আপনার শৈশবে ফিরে গেছেন, তবুও এটা ধরে নেয়া অবশ্যই যুক্তিযুক্ত হবে না যে, সময় পরিভ্রমণ করে আপনার জন্মের আগের সময়েও আপনি যেতে পারবেন। এ ধরণের প্যারাডক্স এড়ানোর জন্য দুটি বিকল্প কথা চিন্তা করা যায়। একধরণের সামাধানে বলা হয় যে, অতীত সময় পরিভ্রমণকারীরা নতুন একধরণের টাইমলাইন সৃষ্টি করবে। যেটা প্রকৃত ঘটনা, যেটা ঘটেছে সেটার সমান্তরাল কিন্তু স্বাত্বন্ত্র্যপূর্ণ হবে। যেমন ধরে নেয়া হলো, টাইম মেশিনের আবিস্কারক অতীত সময় পরিভ্রমণ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির গুপ্তহত্যা প্রতিরোধ করতে চাইল। সে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে কোন একদিন টাইম মেশিনে রওনা হলো এবং ১৯৬৩ সালের ২২শে নভেম্বর (কেনেডির মৃত্যুদিন) সকালের ডালাসে পৌছাল, সকালের সংবাদপত্র সেদিনকার তারিখ নিশ্চিত করছে। শহরের সবাই কেনেডিকে উঞ্চ অভিনন্দন দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে এরকম অনেক কিছু। কিন্তু প্যারাডক্সের সমাধান মতে এটা অরিজিনাল ১৯৬৩ সালের ২২শে নভেম্বর নয়, যেদিনের ইতিহাস বইয়ে আছে অথবা প্রবীনদের মস্তিষ্কে আছে। অরিজিনাল ২২শে নভেম্বর ১৯৬৩ সালে আমাদের ভ্রমণকারী যেখানে ছিল না, সে সেদিনকার সংবাদপত্রের কপিও কেনেডি অথবা কেনেডির হত্যাকারী অসওয়ার্ল্ডকে দেখে সন্দেহ করেনি। তার এই সকাল পৃথিবীর ইতিহাসে কখনও ছিল না। তাহলে ভ্রমণকারী প্রকৃতপক্ষে ১৯৬৩ এর ২২শে নভেম্বর যায়নি। সুতরাং এক্ষেত্রে কেনইবা দাবী করা হবে যে ঐ সময়ে গিয়েছিল। এটার সমাধান হলো আসলে সময় পরিভ্রমণকারী যেখানে যাবে সেটা একটা সমান্তরাল বিশ্ব, যেখানে পৃথিবীর সমান্তরাল কিছু ঘটনাই অথবা ধরা যাক প্রকৃতপক্ষে এখানে যা ঘটেছে সেটাই ঘটেছে। সময় পরিভ্রমণ প্যারাডক্স সমাধানের দ্বিতীয় পন্থায় ধরে নেয়া হয় যে, পরিভ্রমণকারী ঐ সময়ে পরিভ্রমণ করবে ঠিকই কিন্তু ঘটনার কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারবে না। অর্থাৎ ধরে নেয়া হলো যে, পরিভ্রমণকারী ১৯৬৩ সালের ২২শে নভেম্বরে পৌঁছল ঠিকই, সংবাদপত্র কিনে সেদিনের তারিখ দেখে নিশ্চিতও হলো, এমনকি কেনেডির গুপ্তহত্যা ঠেকাতে চেষ্টাও করল কিন্তু পারল না। অথবা অসওয়ার্ল্ডকে গুলি করা থেকে নিবৃত্তও করল কিন্তু ধরে নেয়া হলো যে, সেখানে আরো গানম্যান ছিল যাদের সে রুখতে পারল না। অর্থাৎ সময় পরিভ্রমণকারীরা অতীত সময়ে যেতে পারল ঠিকই কিন্তু প্রকৃত ঘটনা বা ইতিহাসের কোন পরিবর্তন করতে পারল না। এধরণের সময় পরিভ্রমণ যৌক্তিকভাবে সমর্থনযোগ্য হতে পারে কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এটা ফিজিকালী বা শারীরীকভাবে সম্ভব হবে। কারণ, হিসেব করে দেখা গেছে যে, একাজে যে পরিমাণ শক্তির দরকার হবে সেটা প্রকৃত অর্থেই অকল্পনীয় এবং প্রকৃতি সে পরিমাণ শক্তিকে সমর্থনও করে না। আবার একটি যুক্তি দিয়ে অনেকে দেখিয়ে দেন যে, সময় পরিভ্রমণ বাস্তবে কখনও সম্ভব নয়। যদি ধরেই নেয়া হয় বর্তমান প্রযুক্তিগত অসুবিধার কারণে শারীরীকভাবে সময় পরিভ্রমণ করতে যে পরিমাণ শক্তি দরকার তা পাওয়া যাচ্ছে না কিন্তু এটা তো অন্তত ধরে নেয়া যাবে যে ভবিষৎতে প্রযুক্তিগত আরো উৎকর্ষ সাধন হলে এ পরিমাণ শক্তি পাওয়া যাবে। অর্থাৎ ভবিষ্যৎ পৃথিবীর মানুষরা সময় পরিভ্রমণ করতে পারবে। সুতরাং অবশ্যই তারা অতীত পৃথিবী ভ্রমণ করতে চাইবে। কিন্তু আমরা কি আমাদের মানব সভ্যতার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এরকম কোন অতীত সময় পরিভ্রমণকারী দেখতে পাই? সুতরাং হাজার হাজার বছর পরের উন্নত প্রযুক্তির পৃথিবীর মানুষই যদি সময় পরিভ্রমণ করে আমাদের এ সময় বা আগেকার কোন সময়ে আসতে পারেনি, তাহলে কেনইবা আমরা সময় পরিভ্রমণের ব্যাখ্যা মেনে নেব? সুতরাং ওয়েলসের টাইম মেশিন নিয়ে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়ে সেগুলোকে আগামী দিনের ঘটনা মনে হওয়ার কোন যৌক্তিক কারণ কি মেনে নেয়া উচিত হবে? প্রথম প্রকাশ:http://www.sachalayatan.com/guest_writer/13819 সচলায়তন বাকিটুকু পড়ুন...

বুয়েটকথন-পরীক্ষা আসিতেছে(০১)

কিছুদিন আগে পর্যন্ত পরীক্ষা পেছানোটা একটা ঐতিহ্যর মত পালিত হত বুয়েটে।প্রতিটি টার্মের ক্লাস শেষে পরীক্ষা আসত আর সবাই জানত পরীক্ষা পেছাচ্ছে।সম্ভবত শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমহোদয়রাও জানতেন ব্যাপারটা।এজন্য আমরা প্রথমে সাদা কাগজে ছাপানো রুটিন পেতাম,যা আমাদের বোঝাতো আর মাত্র সপ্তাহ দুই পরই পরীক্ষা।আমরা বুঝতে পারতাম পরীক্ষা পেছাবে তবে তার জন্য একটু কাটখড় পোড়াতে হবে ।কাটখড় বলতে এই একটু মিছিলে নামতে হবে আরকি।সুতরাং সারাদিন পড়াশুনা করে (বলাতো যায়না যদি পরীক্ষা না পেছানো যায় কোনমতেই,ঝুঁকি কেইবা নেবে !)রাত্রে বারোটার দিকে মিছিলে নামতে হত একটু(বুয়েটে মিছিল হলে রাত্রেই হয় যাতে স্যাররা কাউকে না দেখে!)।স্যাররা দয়াপরবশ হয়ে পরীক্ষাটা দিতেন সপ্তাখানেক পিছিয়ে এবং দিতেন সবুজ কাগজে লেখা একটা রুটিন।আমরা বুঝতাম আর একটু চাপাচাপি করলে আরএকটু মেওয়া ফলবে।মেওয়ার আশায় আর একটা মিছিল হত এবং পরিশেষে আসত লাল কাগজে রুটিন,পরীক্ষা পেছাত আরও সপ্তাহখানেক।লালবর্ণী রুটিন চূড়ান্ত সংকেত মনে করে প্রবলবেগে পড়ালেখা চালিয়ে যেতাম আমরা।পরীক্ষা পেছানোতে বুয়েট ছাত্ররা বিশেষভাবে পারদর্শী এবং আন্তর্জাতিকভাবে(!) খ্যাত,২০০৬ এর ফুটবল বিশ্বকাপে খোদ স্বাগতিক দেশ জার্মানীতে কোন শিক্ষা- প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল না কোনদিন কিন্তু বু্য়েট বন্ধ ছিল পুরোটা সময়(মিথ্যা পড়েননি!পুরো বিশ্বকাপ দেখার জন্য বন্ধ দেয়া হয়েছিল)।আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে হায়রে দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীরা কতই না ফুটবল অন্তপ্রান অথচ দেশের ফুটবলের কতইনা দুরাবস্তা!কিন্তু না এখানেই ভুল ভাবলেন।আসলে ঐ সময়ে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।আমি নিজে টিভিরুমে বসে সব খেলা দেখেছি কিন্তু আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের খেলা ছাড়া টিভিরুমে গোটা ত্রিশেক লোকের বেশী লোক পাওয়া যেত না।ঐ সময়ে আমরা দেশীয়তো বটেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ামহলে বিশেষ খ্যাতি(!!)অর্জন করেছিলাম।বেশ কিছু বিদেশী ক্রীড়া ম্যাগাজিন ও ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছিল আমাদের ফুটবলপ্রীতির(!) কথা।অনেকে আবার ভাববেন না একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনার উদাহরন দিচ্ছি।২০০২ এর ফুটবল বিশ্বকাপেও ঘটেছে একই ঘটনা।খেলাধুলাপ্রীতিই শুধু নয় পরীক্ষা আসলে আমরা মারাত্বক(!)রকমের দেশপ্রেমেও আক্রান্ত হই।এই যেমন ২০০৪ সনের বন্যার সময় যেটা ঘটল।আমরা গো ধরলাম বন্যার সময় দেশ যথেষ্ট দুরাবস্থায়,এসময় হল দেশমাতৃকার সেবা করার উৎকৃষ্ট সময়,এসময় পরীক্ষা দেয় কোন দুরাত্বা।সুতরাং হলে হলে পোস্টারিং করা হল,মিছিলও চলল কয়েকদিন, পরীক্ষাও পেছালো কয়েকদিন।কিন্তু পরদিন ক্যাফেটেরিয়াতে বন্যার্তদের জন্য রুটি বানানো কার্যক্রমে মিছিলের এক দশমাংশ ছাত্রকেও পাওয়া গেল না।হলে হলে চিরুনী অভিযান চালানো হল সাহায্যকারীর জন্য।নানান ছুতায় পরীক্ষা পেছাতে পেছাতে একবার নাকি(রুমমেটের কাছে শোনা) এমন অবস্থা হল ভিসি ঘোষনা দিলেন আর পরীক্ষাই নেবেন না,অনির্দিষ্টকালের পরীক্ষাবিরতি চলতে থাকল মাসখানেক ধরে।অবশেষে ছাত্রদের বিশেষ অনুরোধে(!) আরও দুই সপ্তাহ পর পরীক্ষা শুরু হল।আজ বু্যেটের যেটুকু সেশনজট তার পুরোটাই এই পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। কথা হল পরীক্ষা কেন পিছায়।যে ছাত্ররা বুয়েটে ঢোকার আগে পরীক্ষাকে মনে করত পরম আরাধ্য তারা কেন বু্য়েটে ঢুকে পরীক্ষা না দিতে পারলে বেঁচে যায়,মিছিলে নামে।এর উত্তর অনেকটা পরীক্ষা চলাকালীন ছাত্রদের মানসিক অবস্থার একটু বিশ্লেষণ করলেই পাওয়া যায়।আগামী পর্বে এবিষয়ে একটু লিখব। প্রথম প্রকাশ:http://www.sachalayatan.com/guest_writer/13879 সচলায়তন বাকিটুকু পড়ুন...

সবকিছু কিনে নেবে তারা

সবকিছু কিনে নেবে তারা তোমার আমার দেশ ,দেশের মাটি পদ্মা-মেঘনা-যমুনার মত সব নদী কিংবা ধর তোমার বাড়ীর সামনের - লাউগাছের মাথায় বশ করার জন্য রাখা লাউটাও। এই যে তুমি আইজুদ্দিন রাস্তা দিয়ে হাটছ সেটা পলাশীর সামনের নির্জন রাস্তাই হোক অথবা মতিঝিলের সামনের রাস্তাটাই হোক না কেন কিংবা ধরেই নও মহাখালী ক্যান্টনমেন্টের সাজানো রাস্তাগুলো সেগুলোও কিনে নেবে তারা। তুমি রমনা পার্কের যে বেন্চিতে বসে তাজবিড়ির পড়ে থাকা মোতা খাও প্রতিদিন সে বেন্চটাও কিনে নেবে তারা যেমনটা কিনে নেবে পুরান ঢাকার মোজাফফর আলীর দোকানের চায়ের কাপের চাটুকুও। সবকিছু কিনে নেবে তারা ধরে নাও তোমার বাড়ীর সামন দিয়ে যে মেয়েটা প্রতিদিন বেনীচুল নিয়ে হেটে যায় তার মাথায় দেয়া তেলটুকুর বোতলও। কিনে নেবে তারা তোমার জুতা ক্ষয়ে গেলে তুমি নীলক্ষেতের যে দোকান থেকে ছোল লাগিয়ে নাও সে দোকানের সব জুতার খোল। কিংবা ধর তোমার উঠটি মেয়েটা যে দোকানে ব্রেসিয়ার কিনতে যায় সে দোকানের সব ব্রেসিয়ারগুলো। সবকিছু কিনে নেবে তারা তোমার দেশের জাতীয় সংসদ,সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রমনা পার্ক ,সের্কেটারিয়েট,প্রধানমন্তীর দপ্তর সূধা সদন,হাওয়া ভবন,সেনা কল্যান ট্রাস্ট কিংবা ধর পাবলিক লাইব্রেরীর যে টয়লেটগুলো তুমি প্রতিদিন দুইবার করে ব্যবহার কর তার দেয়ালের লেখাগুলো পর্যন্ত। কেনে নেবে তারা তোমার গৃহিনীর হাতের কাঁকন প্রিয় সন্তানের ব্যবহৃত স্লেট,বাড়ীর চা খাবার পেয়ালা বিটিভির স্কীন,অফিসের বাস,রাস্তার ম্যানহোল কিংবা তুমি যে মোজাটা বছর দুয়েক হল বিরামহীন পড়ছ সেটাও। কিনে নেবে তারা তোমার দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ,পাটক্ষেতের সব সবুজ পাতা অবুঝ কিশোরের বুকে আকড়ে থাকা বইয়ের পৃষ্ঠা ফার্মগেটের ওভারব্রীজ,সদরঘাটের সব লন্চ ও নৌকা এমনকি তোমার ঘরে সযত্নে রাখাকোরান শরীফের সব সূরাগুলোও। তুমি শাহেদ জামান যে দোকানে বসে চা খাও যে বাজারে বাজার কর যে ব্যাংকে টাকা রাখ অসুখের সময় যে হাসপাতালে যাও অথবা বউয়ের হাতের বালার জন্য বায়তুল মোকাররমের যে দোকানটায় যাও কিংবা তোমার ছেলেটাইবা যে স্কুলে যায় তার সবই কিনে নেবে তারা। তুমি কেরানী আফসার আলী যে পান্জাবী-পাজামা পড়ে অফিসে যাও যে খুশবু শার্টে লাগিয়ে কাজ কর মাসের শেষে পল্টনে যে মেয়েটার কাছে একবার যাও তোমার কাজে যে কালী ব্যবহার কর কিংবা তোমার গৃহিনী যে ডিটারজেন্টে ধোয় তোমার গন্ধ তারও সব কিনে নেবে তারা। তুমি ছাত্র ইরু যে কাগজে কবিতা লেখ কম্পিউটারের যে স্কীনে ছবি দেখ ঘর্মাক্ত দেহে বালিশের যে কভারের উপর মরার মত শুয়ে থাক অথবা বাংলামোটরের জ্যামে ভিক্ষুকের থালায় যে আধুলিগুলো ছুড়ে দাও তারও সব কিনে নেবে তারা। সবকিছু কিনে নেবে তারা তোমার দেশমায়ের বুকে আজ একাত্তরের শুয়োরদের বিষাক্ত নখর। বাকিটুকু পড়ুন...

পতন

সজনে ডাটায় ঝুলে ছিলাম এতদিন -ফল হয়ে টুপ করে ঝরে যাব একদিন ভুলেও ভাবিনি কোনদিন। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/14018 বাকিটুকু পড়ুন...

আমার প্রতিজ্ঞা

আর একবার যদি ঘৃণা কর এই শেষবার বলে রাখলাম কেউই রেহাই পাবেনা তোমরা শরীরে আমার ক্যান্সার কোষ,এইডস এর জীবানু রক্তকে দূষিত করবো আমি তোমাদের। আর একবার যদি ঘৃণা কর বলে রাখছি আমি শহরের বিষাক্ত বায়ুকে স্তরে স্তরে সাজানো মৃত্তিকাকে থরে থরে বিছানো গোলাপ আর অদম্য উৎসাহে লালিত গৃহপালিত জন্তুদের নিমিষে অনস্তিত্ব দেখবে তোমরা নিজেদের । আর একবার যদি ঘৃণা কর কথা ছাড়াই কেড়ে নেব সব সবুজ ধানক্ষেত ,হলুদ রঙা ধানের শীষ চাক ভেঙে তুলে নেব মধু গাভীর ওলান থেকে মুছে দেব দুধের গন্ধ আদ্র্ সকালে ঘাস থেকে তুলে নেব শিশির। আর একবার যদি ঘৃণা কর কিছুই রেহাই দেবনা তোমাদের চিত্রিত হরিণের গা থেকে তুলে নেব চামড়া -জুতা বানাব জল থেকে তুলে নেব ছায়া দরিদ্র চিত্রকরের মতো ফেরী করব বাজারে। ভরা পদ্মার রুপালি ইলিশ আর গৃহপালিত পাখিদের জড়ানো তন্তু সবই খেয়ে ফেলব নাস্তার টেবিলে তোমাদর খাদ্যযন্ত্রের প্রতিটি উপাদান একেকটি এঁটো হয়ে থাকবে আমার । অথচ আর যদি একবার ভালবাস হাতে আমার লেবুপাতার গন্ধ সুগন্ধ বিলোতে আপত্তি নেই আমার বস্তুত সুগন্ধ মাত্রই ছড়াতে ভালবাসে। বাকিটুকু পড়ুন...

যে শহরের তরুণীরা মানুষ ভেবে শবের দিকে হাত বাড়ায়

হাস্নাহেনার গন্ধ বুকে নিয়ে যারা ঘোরে এলোমেলো এ শহরের তরুনীরা তাদের অপাক্তেয় ভাবে শীতের সকালে ঘাসে জমানো শিশিরের ন্যায় যাদের মধ্যে বাসা বাধেঁ ভালবাসা এ শহরের তরুনীরা তাদের কর্পূর ভেবে দেয় উড়িয়ে যে তরুনেরা সঙ্খের কোমল জলে খুঁজতে চেয়েছিল হৃদয়ের প্রতিচ্ছায়া এ শহরের তরুনীরা তাদের বুক ভরে দিয়েছে বুড়িগঙ্গার কদর্য জল। এ শহরের তরুনীরা শহরের বিষাক্ত বায়ুর মতই বিষাক্তময় নিঃশ্বাসে হাঙ্গর ক্ষুধা,হাতে তরুন ভাঙ্গা সড়কি আঙ্গুর সফেদা ভেবে অজান্তে ঝোঁকে মাকাল ফলে। http://www.sachalayatan.com/guest_writer/14018 বাকিটুকু পড়ুন...

আমার ব্যবচ্ছেদ

আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন করে ফেল আমায় আমার সবই নিতে পারবে তুমি আমার চোখ-প্রদীপের শিখার মত চোখ একুশ বছর ধরে দেখলাম তোমাদের পৃথিবী। কন্ঠনালী,অনবরত উচ্চারন করে গেছে যা সত্য মিথ্যার প্রথাগত উচ্চারন। মস্তিস্কের প্রতিটি স্নায়ুকোষ যেখানে অক্লেশে সরল-কুটিল চক্রান্তের জাল হয়েছে বোনা। নিতে পারবে আমার নিয়তযত্নে শ্যাম্পু মাখানো কালো কেশ মেরুদন্ড যেটাকে কখনই দাড়াতে দিতে পারিনি আমার না খেতে পাওয়া শুকনো পাকস্থলী, ফুসফুস- যেখানে অবিরাম সন্চালিত হচ্ছে বায়ুপ্রবাহ এমনকি আমার হাত ও পায়ের অঙ্গুলিও এখনও যেগুলোতে লেগে আছে সামান্য অশৌচ। আমার সবই খুলে নিতে পারবে তুমি শুধু- কেবলমাত্র আমার হৃপিন্ডটা ছাড়া কেননা হৃদয়টা এখন আর আমার দখলে নয়- হৃদয়টা এখন অন্য কারো,কোন এক নারীর। বাকিটুকু পড়ুন...

জীবন

জীবন যেন একখানি জলন্ত দেশলাই জন্ম অদম্য উৎসাহে,রারুদের মত বিস্ফোরনে পোড়ে অবিরাম দ্রুত কিংবা ধীরে,পোড়ায় নিজেকে পোড়ে যেমন দেশলাইয়ের কাঠি দ্রুত কিংবা ধীরে সবটা পুড়ে গেলে হাতকে পোড়ায় মানুষও শব হয়ে কাউকে কাদায়। বাকিটুকু পড়ুন...

সমান্তরাল সহবাস

একবার মুহূর্তের জন্য গিলে ফেলেছিলাম বৃক্ষসমেত বন কিন্তু আশ্চর্যমত পেটে গেড়ে গিয়েছিল বৃক্ষেরা ফলত দানাদার খাদ্য অসহ্য হয়ে উঠেছিল । বৃক্ষেরা তরলমত খাদ্য পছন্দ করে কিছুকাল তাই তরলখাদ্য নিতে হয়েছিল আমার। দা-কুঠার থাকলে বৃক্ষ কর্তন এমন কঠিন কিছু নয় মস্তিস্ক নাড়া দিয়ে উঠল আমার তন্ন তন্ন করে বাড়ি খুজঁলাম,ওসব কিছু নেই(!) অতঃপর গন্তব্য শৈল্যচিকিৎসক মুখলেছউদ্দীন ডাক্টারের পেট কাটার বায়না,আমার কাঁটা ছেড়ার ভয় বললাম পেট কেটে নয়,মুখ দিয়ে টেনে তোলেন ডাক্টার গম্ভীর "বৃক্ষের মূল গেড়ে আছে পেটে ওটা কাটতে হবে"। সারাটা জীবন ছায়ায় রেখেছি আমি কি গাড়ল নাকিওটা কাঁটতে দেই অতঃপর পাঁচশত টাকা ভিজিট এবং প্রস্থান। বৃক্ষেরা গেড়েই থাকল ভিতরে চেষ্টার কমতি থাকল না আমার মাঝে মাঝে ঝড়ে বৃক্ষের পতন বিষয়ক খবর পড়ি দস্তুরমত ঝড়ের বেগে বাতাস দেই ভিতরে কিন্তু কি আশ্চর্যমত কয়েকটা পাতা মাএ পড়ে ভিতরে পচেঁ যায়পেটটা ব্যথা হয়ে থাকে কয়েকদিন ভাবি থাকুক না বরং নিজেই অভিযোজিত হই পৃথিবীতে আর কটা দিন? আপনারা হয়ত এতক্ষন বুঝেই ফেলেছেন একেকটা নারীও একেকটা বৃক্ষ বটে যাদের গিলে ফেলা যায় সহজেই কিন্তু উগলানো যায় না। বাকিটুকু পড়ুন...

এতটুকু আশা নিয়েই শুধু আমি এসেছিলাম

ভরা বর্ষায় জোস্না ঝরার রাতে ছিলাম আমি একা বজরার উপরে,গহীন হাওরে জলের তরঙ্গে দুলে উঠছিল আমার শরীর আমি বেতের চাটাইয়ে শুয়ে তারা গুনছিলাম। আচমকা বৃষ্টি এসে নাড়া দিল- জল বৃষ্টির মাখামাখি,বায়ুর সাথে মিতালী অর্ধেক নিকোটিন হাতে নিয়ে আমি বুঝে চলতাম জল,বৃষ্টি আর বায়ুর আচ্ছাদন। শুধু এতটুকু আশা নিয়েই আমি এসেছিলাম শহরের বিষাক্ত বায়ু বুকে নিয়ে আমি আসিনি কবর খুড়তে। বাকিটুকু পড়ুন...

আমার আত্নহনন বিষয়ক জটিলতা

তৃতীয়বার আত্নহত্যা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর আমার হতাশা আরো প্রগাঢ় হওয়া শুরু করল। আমেরিকা থেকে যখন দেশে ফিরে আসতে হল তখন আমি দেখলাম আমার চারপাশের সবকিছুই কেমন যেন পাল্টে গেছে।বন্ধুবান্ধব আগে যারা ছিল তাদের অনেকেই দেশের বাহিরে ,দেশে যারা আছে তারা বিয়েসাদি করে সন্তান-সন্ততি নিয়ে থিতু হয়েছে।প্রথমদিকে এরা অনেকেই আসত আমার সাথে দেখা করতে।সান্ত্বনা দিত,বলত দেখিস একসময় দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে।অনেকেই এসে আমাকে দেখে বলার মত কোন ভাষা খুঁজে পেত না।এখন কেমন লাগছে,শরীরের কি অবস্থা এরকম দুচারটা কথা বলে চা-নাস্তা খেয়ে চলে যেত। শুধু বন্ধুবান্ধবই নয় নানান রকম লতায়-পাতায় আত্বীয়স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশী যাদের সাথে গত দশ বছরেও কোন যোগাযোগ হয়নি তারাও আসত।বলত ভাগ্যকে কি আর কখনও খন্ডানো যায় দেখ দেশেই কিছু করা যায় কিনা,বসে থেকো না মনের উপর চাপ বাড়বে -এইসব কথাবার্তা আরকি। এইসব হল ভদ্রলোকের কথা।অভদ্রলোকের কথাও কিছু কিছু কানে আসত আমার।মোড়ের চায়ের দোকানদার সেদিন নাকি আমাদের বাসার কাজের ছেলেটাকে বলেছে “হইব না আম্রিকা নানান বেজাতের দ্যাশ,ঐহানে কার লগে কি করছে কে জানে,সব পাপের ফল,আল্লার বিচার”। হ্যাঁ,আল্লার বিচার নিয়েই আমি দেশে ফিরে এসেছিলাম।ধীরে ধীরে আমাকে দেখতে বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত লোকের আসা যাওয়া কমে যেতে শুরু করেছিল এবং এখন বলতে গেলে আর কেউই আসে না। মিশিগানে থাকার সময়ও দেশে আমার বাসায় আমার জন্য আলাদা একটা ঘর ছিল।আমার সব ব্যবহৃত পুরানো কাপড়-চোপড়,বইপত্র,ক্রীড়া -সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় পাওয়া পুরস্কার ও সনদগুলো মা সাজিয়ে রাখতেন।মাঝে মাঝে আমাকে মনে পড়লে নাকি তিনি এগুলো পরিস্কার করতেন আর আমার স্মৃতি হাতড়াতেন।এবার দেশে আসার কিছুদিন পরই আমার স্মৃতিধন্য ঘরটি ছেড়ে দিতে হল,আশ্রয় নিতে হল ছাদের একটা চিলেকোঠার ঘরে।ছোটভাই নতুন বিয়ে করেছে ওর নাকি একটা বড় রুম দরকার।আমি আপত্তি করলাম না।আসলে বুঝতে পারছিলাম আমি ধীরে ধীরে অপাংক্তেয় হয়ে পড়ছি।এরকমই হয়! ছাদের ঘরটিতে আমি আমার আলাদা জগত তৈরী করে নিয়েছি।তিনবেলা নিচ থেকে খবার আসে আর আমি চৈত্রের দুপুরে শহরের কাকদের সাথে আড্ডা দেই।সময় কাটে বড় বিষন্নতায়।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা মনে পড়ে,মনে পড়ে বন্ধুদের কথা,স্মৃতি হাতড়াই ওদের সাথে তোলা ছবিগুলোতে,আমার জন্মদিনে ওদের দেয়া উপহারে। পনেরটার মত বিশেষ বই আছে আমার,বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার সময় চাপ কমানোর জন্য এগুলো আমি পড়তাম।এদেরকে আমি বলতাম চাপরোধীবিদ্যা।মাঝে মাঝে এই বইগুলোই বারবার পড়ি,চোখ ভিজে আসে আমার। আমার পরিচিত পৃথিবী যে পাল্টে গেছে ,চেনা মানুষগুলো অচেনা ঠেকছে এর কারন একটাই-আমি আমেরিকাতে পড়তে গিয়ে দুইপা হারিয়ে ফিরে এসেছি।লং ড্রাইভে যাচ্ছিলাম আমি আর আমার এক বন্ধু।প্লেয়ারে চলছিল আমার পছন্দের গান জন ডেনভারের i am leaving on a jet plane dont know when i will back again……।আসলেই আমি জানতাম না এভাবে আমাকে ফিরে আসতে হবে।লরিটা নাকি বেশ বড়ই ছিল।অনেকে বলেছে বেচেঁ আছি এটাই নাকি ভাগ্য(!)।আমি আমার পাদুটো হারালাম সাথে আমার বন্ধুটিকেও।মাঝে মাঝে ভাবি ঐসময়ে বন্ধুটির চলে গেলেই ভাল হত,দেশে এসে ঝামেলা করতে হতনা।আমি আমার কাটা পাদুটোর দিকে তাকিয়ে থাকি।চোঁখ চকচক করে ওঠে। আগে রাস্তঘাটে পঙ্গু লোকজন দেখতাম।একজন ভিক্ষুককে পঙ্গু দেখলে আমার কোন অসুবিধা হত না কিন্তু মধ্যবিত্ত গোছের একজন শিক্ষিত যখন দেখতাম স্ক্র্যাচ নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে বা বেমানানভাবে বসে যাচ্ছে রিকসায় তখন আমার মনের মধ্যে একধরনের প্রশ্ন জাগত এই লোকটা বেঁচে আছে কেন?বেঁচে থেকে সে কি পাচ্ছে?দুনিয়ার হাজারো লোকের অস্বাভাবিক দৃষ্টি উপেক্ষা করে সে কিভাবে বেঁচে আছে তা কিছুতেই মাথায় ঢুকত না আমার,বিকলঙ্গতার চেয়ে আত্নহননই শ্রেয় মনে হত আমার। হ্যাঁ,আত্নহত্যাই শ্রেয় এটা আরও বেশী করে মনে হল যখন আমি পাদুটো হারালাম।বিদেশে পড়তে কিছু টাকা জমিয়েছিলাম ওগুলোর একটা গতি হওয়া দরকার,বাবা মাকে একবার অন্তত দেখে মরি এরকম সাত পাঁচ ভেবে আমি কায়েস হাসান যে কিনা যথার্থ মানুষ হওয়ার জন্য ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়তে গিয়েছিলাম সেই আমি দেশে মৃত্যুর জন্য ডিসেম্বরের এক শীতের সকালে স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে ঢাকায় পৌছালাম। প্রথমদিকে আমি ভেবেছিলাম আত্নঘাতি হওয়াটা এমন কঠিন কিছু হবে না,বিশেষত নাস্তিক ধরনের লোকের যখন পরকালের কোন চিন্তা নেই।কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ব্যাপারটা যত সহজ হবে বলে চিন্তা করেছিলাম ততটা সহজ হচ্ছে না।আমি প্রথমে ফাঁস দিয়ে চেষ্টা করলাম।ছাদে কাপড় শুকাতে দেওয়ার রশি ফ্যানের সিলিংএ বাঁধলাম।কিন্তু আমার মনে হল সুইসাইড নোট বিষয়ক কিছু লেখা হয়নি,বাসার লোক ঝামেলায় পড়বে।খাতা-কলম নিয়ে বসে পড়লাম।কেন জানি কিছুই লেখা হল না।ঝিম মেরে বসে থাকলাম কিছুক্ষন।মাথার ভিতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল।দ্বিতীয়বার আত্বহত্যার চেষ্টাটা খুবই হাস্যকর ছিল।শ্বাস বন্ধ করে ছিলাম একটানা অনেকক্ষন।চিন্তা করেছিলাম এভাবে নিঃশ্বাস বন্ধ করে মারা যাব।কিন্তু সবাই জানে এভাবে মরা যায়না।আমেরিকাতে আমি নানাভাবে মানুষের আত্নহত্যা দেখেছি।কেউ হাতের শিরা কেটে সব রক্ত বের করে মরেছে,কেউ গ্যাসের চুলার জ্বলন্ত শিখার নিচে মাথা দিয়ে মরেছে। দ্বিতীয়বার ব্যর্থ আত্বহনন প্রচেষ্টার পর আমি বুঝতে পারলাম এরকম কোনভাবেই আমার হবে না।তাই শেষবার আমি খুব কাপুরুষতার সাথে ঘুমের ট্যাবলেট দিয়ে আত্নহননের কথা ভাবলাম।পানিভর্তি একটা কাচের গ্লাসে গুনে গুনে পনেরটি ট্যাবলেট মিশিয়ে আমি বসে থাকি,আমার চিলেকোঠার ঘরের ঘড়িটিতে সময় গড়িয়ে যায়,রাস্তার মোড়ের কুকুরটি করুনসূরে ডাকতে থাকে আমার মরা হয়না। পঙ্গু,অপাংক্তেয়,বিচ্ছিন্ন এই আমি একটি আত্নহত্যার স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকি। বাকিটুকু পড়ুন...

সবুজ খাম

প্রতিদিন সকালের রোদ মুখে আসার পর আমার ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস। কিন্তু আজই প্রথম এর ব্যতিক্রম হয়ে গেল। আর মাত্র মাস খানেক পরই আমার ফোর্থ ইয়ার অনার্স ফাইনাল। সারাবছর বলতে গেলে কোন পড়াশোনাই হয় না। তাই পরীক্ষার আগের এই একমাসই ভরসা। কয়েক দিন যাবত অনেক রাত জেগে পড়তে হচ্ছে। সকালের দিকে এমন ঘুম আসল যে যখন বিছানা থেকে উঠলাম তখন বারোটা পেরিয়ে গেছে। সকালের ক্লাসটা মিস হয়ে গেল। অবশ্য ক্লাস করে যে খুব একটা লাভ হয় তা নয়। পরীক্ষার আগে গুটিকয়েক প্রথাগত প্রশ্ন পড়েই যদি বেশ চলে যায়, ক্লাস করেই তবে কী লাভ। তবুও আমি যে নিয়মিত ক্লাসে যাই সেটার জন্য একটা কারণ আছে। সেটা না হয় একটু পড়ে বলা যাবে। হলের সরু প্যাসেজ দিয়ে বাথরুমের দিকে যাচ্ছি। পাশের রুমের জালাল জিজ্ঞেস করল, মামু কি খবর, গল্পটা পড়ছ তো? জালাল আমার ভাগ্নেগোছের কেই নয়। তবুও সে আমাকে ও নামেই ডাকে, যদিও এ বিষয়ে আমার যথেষ্ট আপত্তি আছে। এজন্যই ভাগ্নের আবদার হিসেবে আমাকে তার লেখা কিছু অখাদ্য গল্প-কবিতা পড়তে দেয়। আমি অবশ্য গল্প-কবিতার তেমন কিছু জানি না। তারপরও অখাদ্য বললাম, কারণ আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি জালালের গল্প-কবিতার একমাত্র পাঠক আমিই এবং সে শত চেষ্টা করেও এ জিনিস আর কাউকে গেলাতে পারেনি। আমি বললাম, বেশ ভালই হয়েছে, চালিয়ে যাও। জালালের চোখমুখ দেখে মনে হলো সে বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছে অনেকটা। সকালের নাস্তাটা করতে হলো নুরুর দোকান থেকে। অবশ্য এটাকে সাকলের নাস্তা বলা যায় কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। ঘড়িতে দেখলাম প্রায় একটা বাজে। দুপুরে একটা ক্লাস আছে, যেতে পারলে নিম্মির মুখটা অন্তত একবার দেখা যেত। এই মেয়েটাকে আমি গত পাঁচ বছর ধরে ভালবেসে আসছি, কিন্তু কখনো বলতে পারিনি। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব দুর্বল মানুষ। এতটাই দুর্বল যে, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পরের বছরেই যখন আমার বাবাকে ছেড়ে মা দ্বিতীয় বিয়ে করলেন তখন তার প্রতি রাগ করতে পারলাম না। সুতরাং আমি যে নিম্মিকে আগামী কয়েক মাসেও বলতে পারব না, আমি তোমাকে ভালোবাসি, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকবে না। হয়ত বিশ্ববিদ্যালয় পার হয়ে স্বাভাবিকভাবেই বিয়ে-শাদী করে জীবন যাপন করব। তারপর একদিন হঠাৎ রাস্তায় তার সাথে দেখা হলে মনে মনে ভাববো এই মেয়েকে আমি একসময় ভালোবাসতাম, সে কি কখনও সেটা জানার চেষ্টা করেছিল। এই কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আতিফ ইকবাল একটা জলন্ত- সিগারেটকে দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করতে লাগলাম। নুরুর নাস্তা এসে পড়েছে। নাস্তা বলতে একটা পেটকাটা রুটির ভেতরে ডিমপোচ। শুনলে হয়তো অনেকে বিশ্বাস করতে চাইবে না যে আমি এই একই নাস্তা গত চার বছর ধরে সকাল থেকে খেয়ে আসছি। ব্যাপারটা এতটাই একঘেয়ে হয়ে এসেছে যে এই একঘেয়েমোটাকে আর একঘেয়েমো বলে মনে হতে চায় না। শহীদুল্লাহ হলের ছাত্রদল সভাপতি সেলিম এসে আমার পাশে বসল। রাজনীতি বিষয়ক ব্যাপারগুলোতে আমি মোটামুটি নিরপেক্ষ থাকার ভান করি এবং চেষ্টা করে যাই যাতে সব নেতার মত জুগিয়ে চলা যায়। সেলিম হলের ছিটের ব্যাপারে কি যেন সব জটিল হিসাব বোঝাতে চাইল তার আগাগোড়া কিছুই বোঝা গেল না। তবে যেটুকু বোঝা গেল তাতে এটা স্পস্ট হওয়া গেল যে, আগামী বছর থেকে যাতে বিরোধী কোন দলের ভর্তিকৃত নতুন ছাত্র হলের ছিটে ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে তারা দেখবে। সেলিমকে এক কাপ চা খাইয়ে আমাকে নিস্তার পেতে হলো। দুপুর আড়াইটায় শহীদুল্লাহ হলের গেট পেরিয়ে বিজ্ঞান ভবনের দিকে রওয়ানা হলাম। নিম্মির টয়োটা করলাটাও এসে পড়েছে। গেটের সামনে বিশ্বজিৎ দাঁড়িয়ে আমড়া খাচ্ছে। আমাকে দেখে আমড়ার দুটো ফাল এগিয়ে দিল। শালীর বেসটা দেখছস, জোশ - একটা লোভী ভঙ্গিতে কথাটা বলল বিশ্বজিৎ। এই বেসটা জিনিসটা যে কি সেটা আমি বেশ ভালভাবেই বুঝি, অন্য সময় হলে হয়ত এরসাথে আমিও দু’একটা জিনিস যোগ করতাম, কিন্তু নিম্মির টয়োটা করোলার ড্রাইভারকে দেখে নিবৃত্ত হলাম। নিম্মির সাথে আমার পরিচয় হবার ঘটনা যতটা স্বাভাবিক হওয়ার কথা ছিল ততটা স্বাভাবিকভাবে হয়নি। মফস্বলের একটা কলেজ থেকে পাশ করে সবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল পরিবেশে এসেছি। প্রথম দিনে বিজ্ঞান ভবন খুঁজতে এসে অন্য বিল্ডিং-এ ঢুকে পড়লাম। এদিক-ওদিক ক্লাসরুম খুঁজছি, এমন সময় একটা মেয়ে এসে বিজ্ঞান ভবনটা কোনদিকে হবে জানতে চাইল। চিন্তা করে দেখলাম যদি বলি জানি না তবে সেটা প্রেস্টিজের জন্য খুব একটা সুবিধা হবে না। নিরুপায় হয়ে পার্শ্বের একটা বিল্ডিং দেখিয়ে দিলাম। ক্লাস শেষে বেরিয়ে আসছি এমন সময় দেখলাম মেয়েটিও আমাদের সাথে বেরিয়ে আসছে। তবে আমাকে দেখে তার বান্ধবীকে যে কথাটা বলল সেটা মোটেও শ্রুতিকর কিছু হল না। শুনতে পারলাম বান্ধবীকে বলছে, আমাদের সাথে তো দেখছি একটা গাধাও ভর্তি হয়েছে। ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল এভাবে এবং আমি নিশ্চিত নিম্মি আজ পর্যন- আমাকে গাধার চেয়ে উচ্চতর কোন প্রাণী মনে করে না। বিশ্বজিৎ এর সাথে কথা বলতে বলতে ক্লাসের মিনিট পনের খেয়ে ফেললাম। বাকী তিরশি-চল্লিশ মিনিট ক্লাস করব কিনা ভাবছি, এমন সময় দেখলাম বাক্কু সুমন আমায় দেখে এগিয়ে আসছে। ভাবলাম, যাক আজ আর ক্লাস করতে হবে না। সামনের দিকে কিছুটা ঝুকে হাটে বলে একে আমরা বাক্কু নামে ডাকি। গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ হলো নামকরা আতেল। বাংলাদেশে তো অবশ্যই, পৃথিবীতে সম্ভবত খুব কম জিনিসই আছে যেটা সে জানে না। অবশ্য সে জানাটা যে কতখানি বিশুদ্ধ সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তার মুখোমুখি হলেই সে একটা বিষয় নিয়ে লেকচার দেয়া শুরু করবে, যেটার স্থায়ীত্ব কম করে হলেও মিনিট বিশেক হবে। আমি বাক্কু সুমনকে কাটানোর জন্য করিডরে লুকিয়ে পড়লাম। ক্লাস শেষে নিম্মি বের হয়ে আসল। আমি কাধে ঝোলানো ব্যাগ একটা নোট বের করে নিম্মিও দিকে এগিয়ে দিলাম। নিম্মি তোমার ক্লাস নোট। কাজ শেষ? শেষ না, শেষের শুরু। মানে? মানে কপি শেষ পড়া বাকী। ওহ্‌, তাই বল। বাসায় যাচ্ছ? বাসায়ই যাচ্ছিলাম, কিন্তু রফিকটা জোড় করে ধরেছে। বলাকায় কী জানি একটা নতুন ছবি এসেছে, ওরা সবাই মিলে দেখবে। আমারও নাকি টিকেট কেটেছে। ওদের সাথে যেতে হচ্ছে। ও, আচ্ছা। নিম্মির সাথে কথাবার্তা মোটামুটি এরকম একটা গতানুগতিক রূপ নিয়েই এগিয়ে যায় প্রতিদিন। অন্যান্য বন্ধুবান্ধবদের সাথে যে রকম ঘনিষ্টতা আমার সাথে, যেন ততটাই দূরত্ব নিম্মির। আমাদের কথাবার্তা মূলত দু’চারটা নোট আদান প্রদান বিষয়কই হয়। ছাত্র হিসেবে আমাকে অনেকেই ভালো কিংবা অনেকে ব্রিলিয়ান্ট বলে থাকে। তবে ভালো ছাত্রের যেরকম বৈশিষ্ট্য থাকা উচিৎ সেরকম কিছু আমার কাছে নেই। তবে একটা জিনিস যেটা আছে সেটা হলো স্মরণশক্তি। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার আগে একমাস ঘরের দরজা বন্ধ করে পড়া মুখস- করি আর পরীক্ষার হলে ঢেলে দিয়ে আসি। আশ্চর্য হয়ে আমি লক্ষ্য করেছি, এতেই আমি অবলীলায় ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড, থার্ড কিংবা একবার তো ফার্স্টই হয়ে গেলাম। সুতরাং ছাত্রছাত্রীদের সাথে আমার যে ঘনিষ্টতা আছে সেটা অনেকটা নোটের সূত্র ধরেই। এই পাঁচ বছরের বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে কেউ আজ পর্যন্ত- আমাকে বলেনি, দোস্ত, চল একটা ছবি দেখে আসি কিংবা দোস্ত- রূপার অথবা নিলার জন্য একটা চিঠি লিখে দে। নিম্মির সাথে আমার যে সামান্য কথাবার্তা হয় সেটা নোটের মাধ্যমেই। কতবার মনে হয়েছে নোটের ভিতরে লাল কালিতে লিখে দিই, নিম্মি তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু কখনই লেখা হয়নি, সম্ভবত কোনদিন হবেও না। কতবার মনে হয়েছে নোট নেয়ার সময় একবার নিম্মির হাতটা ছুঁয়ে দেখব কিন্তু আমি দুর্বল মানুষ, সুতরাং সে সৌভাগ্য আমার কখনই হয়নি। তবুও মনে মনে ভাবতাম থাক, যাকে ভালোবাসি তাকে তো প্রতিদিন একবার অন্তত দেখতে পারছি। ক্লাস, প্র্যাকটিকাল কোনটাই না করে আমি ধানমন্ডির দিকে রওয়ানা হলাম। কাল আমার জন্মদিন। চার বছর হলো জন্মদিনের একদিন আগে প্রতিবছর আমি ধানমন্ডিতে একবার ঘুরে আসি। এখানে আমার মা তার স্বামীর সাথে বাস করেন। প্রতি বছর এই দিনে আমার মনে হয় তাকে গিয়ে একবার বলি, আমার জানতে ইচ্ছা করে আমার বাবা কে? আমার জন্ম নিয়ে আমার বাবার এক ধরণের সন্দেহ ছিল। আমি জন্মানোর আগ পর্যন্ত- এই লোকটা নাকি জানতো তার দ্বারা কখনও সন্তান উৎপাদন সম্ভব নয়। সুতরাং আমার পঁচিশ বছরের জীবনে আমি কখনই আমার বাবা-মাকে হাসি মুখে কথা বলতে দেখিনি। অবশ্য আমি যে আমার মাকে এই প্রশ্ন করতে যাচ্ছি, আমি জানি এটা স্রেফ যাওয়ার ইচ্ছা বলে যাওয়া। আমার দ্বারা কখনই মাকে এরকম কথা বলা সম্ভব নয়। গত চার বছরের মতো এবারও হয়ত আমাকে বাড়ীর গেট থেকেই ফিরে আসতে হবে। তবুও যাওয়া বলেই যাচ্ছি। ফোর্থ ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষাটা বেশ ভালই হল। সম্ভবত এবারও ফার্স্ট ক্লাস থাকবে। সামনে অনেক অবসর। আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই বলে আমি হলেই পড়ে আছি। পরীক্ষা শেষে সবাই বাড়ীতে চলে গেছে, হল অনেকটা ফাঁকা। দু’একজন ছাত্রকে পড়াই আর পাবালিক লাইব্রেরীতে পড়ি। বিকেলটায় অনেক সময় নিম্মির বাড়ীর গেট থেকে বা আমার মায়ের বাড়ীর গেট থেকে ঘুরে আসি। চৈত্রের এক দুপুর। সকাল থেকে না খেয়ে বিছানায় পড়ে আছি। হলের ডাইনিং বন্ধ, বাইরে যেতে ইচ্ছা করছে না। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি। একটা লাল করোলা শহীদুল্লাহ হলের গেটে থামল। একটা লাল শাড়ী পরা সুন্দর মেয়ে গাড়ি থেকে নামল। মেয়েটাকে একবার দেখে অন্যদিকে তাকানো যায় না। তবুও আমি চেষ্টা করে দৃষ্টি বড়ই গাছের ডালে বসা কাকের গায়ে ফেললাম। দুটো কাক একটা ডালে বসে আছে। ওরা কী স্বামী-স্ত্রী নাকি প্রেমিক-প্রেমিকা। কা কা করে একটা কাক উড়ে গেল, সাথে সাথে অন্য কাকটাও তার পিছু নিল। দরজায় ঠক্‌ ঠক্‌ করে করার শব্দ হচ্ছে। উঠে গিয়ে দরজা খোলার ইচ্ছে হচ্ছে না। বললাম কে, কাকে চান? এখানে কি আতিক ইকবাল থাকেন? - মেয়ে মানুষের কন্ঠ শুনে উঠতেই হল। দরজা খুলে দেখি একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে একটা সবুজ খাম। মেয়েটা যে কে সেটা চেনার জন্য আমাকে একটু কষ্ট করতে হলো। পরে বুঝলাম এটা নিম্মিই। একটা মেয়ে সেলোয়ার থেকে শাড়ী পড়লে যে পুরো পাল্টে যায় সেটা প্রথম বুঝলাম নিম্মিকে লাল শাড়ী পড়তে দেখে। আরে তুমি - আমি হন্তদন্ত হয়ে বললাম। নিম্মি দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। একটা কাঠের চেয়ারে বসে হেসে হেসে বলতে লাগল, তুমি তো কোন খোঁজ নাও না, তাই আমাকেই আসতে হলো। আমি কী বলব বুঝতে না পেরে মাথা চুলকাতে লাগলাম। নিম্মি একটা সবুজ খাম আমার দিকে এগিয়ে দিলো। খামটা দেখেই আমার বুঝা উচিৎ ছিল এটা কীসের। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না, বুঝার জন্য খামটা খুলতে হলো। নিম্মির বিয়ে, ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। আমি গালদুটো প্রসারিত করে হাসার চেষ্টা করতে লাগলাম যেন এসময় হাসাই উচিৎ। কিছু বলার মতো খুঁজে না পেয়ে বললাম, পাত্র ভাল, তুমি সুখী হবে। কথাটা শুনে নিম্মি তার মুক্তোর মতো দাঁতগুলো বের করে হাসতে লাগল। কতদিন আমার বলতে ইচ্ছা হতো নিম্মি তোমার হাসিটা দেখলে বুঝা যায় আসলেই মানুষ হাসতে পারে; কিন্তু কোনদিন বলা হয়নি। আজ এ ইচ্ছাটা বড় বেশী করতে লাগল। কিন্তু আজও বলা হলো না। সব কথা কী বলা যায়। তুমি আসবে। অবশ্যই - আমি তাড়াতাড়ি জবাব দিলাম যেন আমি না গেলে তার বিয়েই হবে না। আমাদের কত কিছুই বলার ছিল, কিছুই বলা হয়নি, না? নিম্মি এই যে কথাটা বলল, আমি এটার কোন অর্থ ধরতে পারলাম না। একটা কথা আমরা ছয় বছরেও বলতে পারলাম না, না? এ কথাটাও আমার বোঝার কথা; কিন্তু আমার মনে হতে থাকল নিম্মি ভুল বলছে। একবার তুমি আমাকে ছুঁয়েও দেখবে না? আমার খুব ইচ্ছে হলো নিম্মিকে একটু ছুঁয়ে দেই। আমি হাত ওঠানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু আবিস্কার করলাম কী যেন একটা অদৃশ্য জিনিস আমার হাতকে আটকে রেখেছে। আমার খুব বলতে ইচ্ছা হলো, নিম্মি তোমাকে ভালোবাসি। নিম্মি ঘর থেকে ধীরপায়ে বেরিয়ে গিয়ে লাল টয়োটা করোলাটাতে উঠলো। আমি জানালা দিয়ে নিম্মির যাওয়া দেখতে লাগলাম। আমার হাতে সবুজ খাম। আমি খামটা খুলতে লাগলাম, অনুভব করলাম কেউ যেন আমার ভালোবাসাকে এই খামে আটকে ফেলেছে। প্রথম প্রকাশ:http://www.sachalayatan.com/guest_writer/13757 সচলায়তন বাকিটুকু পড়ুন...