একটি কর্তিত বৃক্ষের জন্য এলিজি

এই লেখাটা একটা গাছকে নিয়ে লেখা , প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের একটা গাছ যেটাকে বছর চারেক ধরে দেখছি এবং হঠাৎকরে মাত্র ঘন্টা চারেক আগে কেটে ফেলা হবে এমনটা কখনো চিন্তাও করিনি। অনেকদিন ধরে সচলে লিখিনা , টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা , অমানুষিক পড়াশুনার চাপ । মাঝে মাঝে নেটে ঢুকলে সচলেই ঢুকি , অফলাইনেই থেকে পড়ি , লেখা-টেখায় কমেন্ট না করেই চলে যাই - আবার পড়তে বসি । এভাবে ঝাড়া মাসদেড়েক চলার পর পরীক্ষা শেষ হয় । আমিও হাত-পা ঝেড়ে উঠি , সচলে লিখব বলে লেখার প্লট রেডী করি গল্প -কবিতা এইসব আরকি । কয়েকদিন ধরে মাথার মধ্য একটা গল্প ঘোরে , গতকাল রাতে লিখেও ফেলি কয়েকটা প্যারা । বাকীটা লিখব ভেবে আজকে অলস দুপুরে দীর্ঘক্ষণ ঘুমিয়ে বিকেলে ঘুম থেকে থেকে উঠি , চা-টা খেতে যাই পলাসী বাজারে । মাথায় গল্পের প্লট ঘোরে কিন্তু আমি জানি গল্পটা আজকে আর লেখা হয়ে উঠবে না । চারতলার সিঁড়ি দিয়ে নামতেই আমার মনে হয় চারপাশে কিছু একটা নেই । নিচে নেমে দেখি হলের লোকজন ডালপাতা সরাচ্ছে , অর্ধেক কাটা একটা গাছ মাটি থেকে তিন-চারফুট উচ্চতা নিয়ে কোন ধরনের শাখা-প্রশাখা ছাড়াই দাড়িয়ে আছে । আমার ভাবতে কষ্ট হয় এটা সেই গাছটা যেটা প্রতিনিয়তই দেখছিলাম , যেটা কখনও আলাদা করে নিজের অস্তিত্ব ঘোষনা করেনি , আমরাও বুঝতে পারিনি আলাদাভাবে সে আমাদের সাথে মিশে আছে কিন্তু তার অনস্তিত্ব এখন বেশ বড় করে বাজে , আমি বুঝতে পারি কেউ একজন আশেপাশে ছিল যে আজ নেই , যেন চারপাশটা ফাঁকা করে কেউ একজন চলে গেছে। গেটে একজন কর্মচারী ছিল । আমি তাকে বলি কে কাটল গাছটা । আমার কন্ঠে বোধহয় কিছুটা আলাদা কোন ঝাঁঝ ছিল । সে বুঝতে পারে । উত্তর দেয় প্রভোষ্ট স্যারের নির্দেশক্রমে হলের লোকজন কেটেছে । আমি কাটার কারন জানতে চাই । সে কোন উত্তর দিতে পারে না , শুধু বলে স্যার বলেছে এজন্য লোকজন কাটছে । সে ও ব্যাপারটা মানতে পারে না বলে গাছটা কাটায় পুরো বিল্ডিংটা কেমন জানি ন্যাড়া হয়ে গেছে । আমি তাকে আর কিছু বলিনা , কাটা গাছটার দিকে বোকার মত অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকি । এই দুনিয়ায় অনেক কিছুই হচ্ছে যেগুলো নিয়ে আমি কখনও মাথা ঘামাই নি । চারদিকে কথাবার্তা হয় পরিবেশ দূষন হচ্ছে , গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত , গাছ লাগাতে হবে , পরিবেশ রক্ষা করতে হবে -এইসব কথাবার্তা কখনও আলাদাভাবে দৃষ্টি আকর্ষন করেনি আমার । সুতরাং গাছটা কাটায় পরিবেশের কি ক্ষতি হল ,না না হল তা আমার মাথাব্যথার বিষয় নয় । খুব স্বার্থপর একজন মানুষ হিসেবে আমার শুধু নিজের কথাটাই মনে হচ্ছে , মনে হচ্ছে কেউ একজন আমার খুব কাছে ছিল আজ সে নাই । আমার অভিযোগটা সেই শুন্যতাটা নিয়েই । আগে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে-নামতে গাছটা দেখতাম এখন আর দেখতে পাব না , আমার অভিযোগ এই শূন্যতাটা নিয়েই । আমি অনেকক্ষন ধরে কাটা গাছটার দিকে চেয়ে থাকি । দু-চার জন ছাত্র হলে ঢোকে , এদেরও চোখে জিনিসটা অস্বাভাবিক লাগে । কেউ কেউ স্বগতোক্তি করে আহ! হঠাৎকরে গাছটা খামাখা কাটল কেন ?শূন্যতা জিনিসটা কারই বা ভাল লাগে ? পরিশেষ: সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোষ্ট মহাশয়কে বলছি , জানি লেখাটা হয়ত কোনভাবেই আপনার নজরে পড়বে না , কিন্তু আমার বলা দরকার সেজন্যই বলছি , হলের বাজেটে সমস্যা হলে প্রতি বছর ছাত্রদের প্রদেয় ফি বিশ টাকা করে বাড়ান কিন্তু হুটহাটএরকম পুরানো কোন গাছ দয়া করে কেটে ফেলবেন না ।(২৯ জুন ২০০৮ রাত নয়টায় লেখা) http://www.sachalayatan.com/guest_writer/16388