যাপিত জীবন-০৪ : : একটি বিয়ে ও কুফাকাহিনী

১। বন্ধুর বোনের বিয়ে । আমাকে ফোন করে বলল আমি যেন ঠিক সাড়ে ছটায় সেগুনবাগিচাতে কমিউনিটি সেন্টারে যাই । আমি বললাম ঠিক আছে । আমি আবার কাউকে কোন সময় দিলে ঐ সময়ের আগেই চলে যাই, স্বভাবের দোষ । এবারও রওয়ানা হলাম আধঘন্টা আগে মানে ছটায় । সেগুনবাগিচাতে গেলাম , বন্ধু আমাকে যে কমিউনিটি সেন্টারের নাম বলে দিয়েছিল সেটা কষ্ট করে খুঁজেও বের করলাম । কমিউনিটি সেন্টারে দেখি অন্তত বিয়েবাড়ির কেউ নেই , কিছু লোকজন আছে টেবিল চেয়ার ঠিক করছে ঝাট-টাট দিচ্ছে এটা সেটা। আমি ভাবলাম কি ব্যাপার ভুলভাল জায়গায় চলে এসেছি নাকি । বন্ধুকে ফোন দিলাম । সে বলল একটু ঝামেলা হয়ে গেছে আর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই নাকি সবাই আসবে । আমি ভাবলাম হৈছে , এতদিন জানতাম আমন্ত্রিত অতিথিরা আসে বিয়ে হওয়ার সময় বা বিয়ে শেষ হওয়ার পর । টুপ করে খেয়ে উপহার সামগ্রী দিয়ে কেটে পড়ে । এই প্রথম দেখলাম কেউ একজন(মানে আমি আরকি) আসছে বিয়েবাড়ীর লোকজন আসার আগে । যাক এসেই যখন পড়েছি চারপাশে একটু চক্কর দিলে কেমন হয় । কমিউনিটি সেন্টারটার পিছনে গেলাম । ওখানে দেখি কিছু লোকজন মুরগীর চামড়া ছিলছে , কেউবা আলু-টালু জাতীয় জিনসপত্র কাটছে । আমি ভাবলাম হইছে , খাওয়া আজকে হবেনে ! এই জিনিসগুলা মাত্র ছিলতেছে । এরপর রান্না হবে । সেই বান্না আবার খাব । বুঝছি রাত দশটার আগে আর খাওয়া জুটবে না কপালে । বন্ধুর উপর রাগ হল । শালা , ডাকলিই যখন এত আগে ডাকলি ক্যান, আটটার সময়ে ডাকলেও তো পারতি , এমন সময়ে ডাকছস সবার আগে এসে হাজির হইছি !

২। পকেটে আমার সাকুল্যে ছিল পাঁচশত টাকার একটা নোট আর খুচরা বিশ টাকার মত । ভাবলাম খেতে তো দশটার মত বাজবে , যাই ফাঁকে বিকেলে কিছু খেয়েও আসি আর পাঁচশত টাকার নোটটাও ভাঙ্গায়ে নিয়ে আসি , রাত্রে তো আবার বিকশাওয়ালা এখান থেকে পলাশী ত্রিশ টাকার কমে যাবে না । কমিউনিটি সেন্টারের পাশেই একটা দোকানে গেলাম । সিংগারা , সমুচা আর কফি খেয়ে তেইশ টাকা বিল হল । পাঁচশত টাকার নোটটা ধরায়ে দিলাম দোকানদারের হাতে । নোটটা দেখে দোকানদার যেন আকাশ থেকে পড়ল । ভাংতি দেই কেমনে , ভাংতি ছিল কিন্তু কয়েকজন দোকান থেকে বড় অংকের টাকা ভাঙ্গায়ে নিয়ে গেছে , বেচাবিক্রি নাই তাই ভাংতি টাকা থাকে না -- এইসব নানান আবজাব কথাবার্তা । আমি মনে মনে ভাবলাম হৈছে ভাই আপনে আমার ভাংতি টাকাগুলাই নেন , এইসব আমারে শুনায়েন না , এমনে নিজেই নানান কষ্টের মধ্যে আছি । দোকানে পকেটের সব খুচরা টাকাগুলো দিয়ে পাঁচশ টাকার নোটটা নিয়ে ফেরত আসলাম । ভাবলাম শুরু হইছে , আজকে কুফা শুরু হইছে , আরও কত কি হয় কে জানে ? না , কুফাকাহিনীর পরবর্তী অংশের জন্য বেশীক্ষন অপেক্ষা করতে হল না ।

৩। সাড়ে সাতটার দিকে লোকজন আসা শুরু করল । আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও দেখলাম দল ধরে একটা গ্রুপ আসল , অধিকাংশই চেনা । এদিক ওদিক মান্জা মেরে হাটছি এমন সময় এক জুনিয়র এসে বলল ভাইয়া আপনি একটা লুপ মিস করছেন । আমি বললাম কিসেরইবা লুপ আবার সেটা আবার মিসইবা কি ? সে বলল প্যান্টের বেল্টটা নাকি যে লুপগুলোর মধ্য দিয়ে যায় সেগুলোর একটার উপর দিয়ে গেছে , দেখতেও নাকি বাজে লাগছে খুব । বাথরুলে গিয়ে বেল্টটা ঠিক করে আনলাম । রে কুফা রে!

৪। বরমশায় আসলেন আটটার দিকে । বিয়েশাদি হয়ে খাওয়া-দাওয়া আসতে আসতে নয়টার মত বেজে গেল । প্রথম শিফটেই বসলাম । তাড়াতাড়ি খেয়ে-দেয়ে কেটে পরি । পরেরদিন আবার ল্যাবের আ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে , হাফ কাজ বাকী আছে । বন্ধুরা মিলে সবাই একসাথে বসলাম । খাবার মাত্র পবিবেশন শুরু হয়েছে এমন সময় আমাদের দাওয়াতপ্রদানকারী বন্ধুসাহেব আসলেন । দুইজন লোক নাকি আছে তাদের খুব তাড়া আছে ,এখুনি খেয়ে বিদায় নিতে হবে , জায়গা নেই । অগত্যা আমি আর একজন বন্ধু টেবিল থেকে উঠলাম । যাক আমরা না হয় একটু পরেই খাই । এদিক ওদিক হাটছি । ভাবলাম যাই এই সুযোগে পাঁচশ টাকার নোটটা খুচরা করে নিয়ে আসি ।রাস্তার দোকানপাট অধিকাংশই বন্ধ । টাকাটা খুচরা করতে আধঘন্টাখানেক লাগল । ফিরে দেখি দ্বিতীয় শিফটটা অলরেডী শুরু হয়েছে এখন তৃতীয় শিফটে বসতে হবে । তৃতীয় শিফটে খব বেশী লোক ছিল না , জনাষাটেক হবে হয়ত । এই জনাষাটেক লোক আমরা ছয়- সাতটা টেবিলে হাত-টাত ধুয়ে বসলাম । বসলাম তো বসলামই খাবার আর আসে না । মিনিট ত্রিশেক পার হয়ে গেল খাবারের কোন হদিস নাই , বন্ধু ব্যস্ত হয়ে আছে বর-কনের সাথে ভিডিওধারিত হতে । অনেকক্ষন পর তার নাগাল পাওয়া গেল । বললাম খাবার কৈ অনেকক্ষন থেকেই তো বসে আছি । সে বলল অনুমানের চেয়ে বেশী লোক দাওয়াতে এসেছে , খাবার মোটামুটি শেষ । বাকী লোকের খাবারের ব্যবস্তা নাকি হচ্ছে । বন্ধুবান্ধবরা যারা এসেছিল তারাও ইতোমধ্য বিদায় নিল । আমরা আরও কিছুক্ষন বসলাম ।অবশেষে খাবার আসা শুরু হল । হাত আবার ধুয়ে এসে টেবিলে বসলাম । কিন্তু কুফা যে আরও কিছু বাকী ছিল এটা জানতাম না । ঠিক আমাদের টেবিলটার সামনে এসে রোষ্ট-টোষ্ট , ভাজা মাংস ইত্যাকার খাদ্য শেষ হয়ে গেল । হাতধোয়াটা আবার মনে হয় বিফলে যায় ! এমন সময় দেখি বন্ধু আসছে । বললাম ধুর মিয়া এখনও তো খাবার পাইলাম না । মেজাজ তখন সহ্যক্ষমতার চূড়ায় উঠেছে । সে বলল এদিক-ওদিক দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া খাবারও নাকি শেষ । এদের একটা চায়নিজ খাবারের রেস্তোরা আছে সেই আইটেমগুলোই এখন দেওয়া হবে। প্রসেসিং চলতেছে , সামান্য একটু আর বসতে হবে । আমি ভাবলাম ওরে ভাই ! চায়নিজই যখন খাওয়াবি আমাদের দুইজনকে হাতে কিছু টাকাপয়সা ধয়ায়ে দে আমরা বাহিরে গিয়ে খেয়ে চলে যাই । খাবারের জন্য এতক্ষন বসে থাকতে ভাল লাগছে না ।

আরও কিছুক্ষন বসার পর বহু প্রতীক্ষার খাবার চলে এল । তৃতীয়বারের মত হাত ধুয়ে আসলাম । এবার আর কোন ভুল করলাম না আমরা , ওয়েটারের সাথে গিয়ে ওয়েটার যে টেবিলে খাবার রাখল সেখানেই জায়গা করে বসে পড়লাম । খাওয়ার সময় বন্ধুটা বলল তাড়াতাড়ি করে রান্নাবান্না করা হয়েছে জন্য নাকি রান্নাটা ভাল হয়নি বিশেষ করে মুরগীর পদটা নাকি খানিকটা অর্ধসিদ্ধই রয়েছে । আমার তখন এইসব আর শোনার সময় নাই । কাচা -টাচা যাই পাচ্ছি তাই গোগ্রাসে গিলে চলেছি । ঘড়িতে তখন সময় সাড়ে এগারোটা , কমিউনিটি সেন্টারটা ততক্ষনে মোটামুটিভাবে ফাঁকা হয়ে গেছে ।